মোঃ নুরুজ্জামান- সুনামগঞ্জ জেলা (প্রতিনিধি)ঃ জলমহাল নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও উত্তেজনা রয়েছে হাওরাঞ্চলে। মামলা মোকদ্দমায় জড়িত জলমহালগুলো নিয়েই উত্তেজনা বেশি। মাছ ধরা শুরু হতেই এসব জলমহালের দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে বিবদমান পক্ষগুলো। মৎস্যজীবী সমিতির নামে উন্নয়ন স্কীমের আওতায় বড় জলমহালগুলো ইজরা হলেও এসব জলমহালে পুঁজি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুই করে আসছে রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা। এ কারণে এই মৌসুমে জলমহাল দখল নিয়ে হতহতের আশঙ্কা থাকে হাওরে হাওরে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সুনই জলমহাল ছয় বছর আগে উন্নয়ন স্কীমের আওতায় ইজারা নেয় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ধর্মপাশার দুটি সরকার দলীয় রাজনৈতিক পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গেল বছর এই সমিতির সুবির বর্মণ নামের এক সদস্যকে দিয়ে আলাদা সমিতি করানো হয়। পরে একই নামের দুই মৎস্যজীবী সমিতি গেল বছর মাছ আহরণের মৌসুমে মাছ ধরতে গেলে জেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এবার (ষষ্ট বছরে) প্রায় তিন মাস আগে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ অন্যান্য বছরের মতো প্রায় ৩২ লাখ টাকা খাজনা প্রদান করেন। একইভাবে সুবির বর্মণ নামে একই সংগঠনের আরেক সভাপতিও খাজনা প্রদান করে জলমহালের মালিকানা দাবি করেন। জেলা প্রশাসন কোন পক্ষকেই জলমহাল বুঝিয়ে দেয় নি। চন্দন বর্মণের পক্ষ উচ্চ আদালতে রীট দায়ের করলে আদালত স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। এরপরও উত্তেজনা কমে নি। জলমহাল দখলের চেষ্টাও থামে নি। চন্দন বর্মণের পক্ষ জাতীয় প্রেসক্লাবে গেল ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং তাঁর ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুখনকে দোষারোপ করে। মৎস্যজীবীরা দাবি করে, সংসদ সদস্যের কারণে নিয়মনীতি মেনে খাজনা দেবার পরও জলমহালে যেতে পারছে না তারা। ৬ ডিসেম্বর সংসদ সদস্যের সমর্থকরা ধর্মপাশায় সংবাদ সম্মেলনে ডেকে এই জলমহালের কোন বিষয়েই সংসদ সদস্য বা তাঁর ভাই জড়িত নয় দাবি করে। এই পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের এক মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে এই জলমহালের দখল নিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ওই জলমহালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার তাহিরপুরের আরেকটি জলমহাল নিয়ে উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করে এই জলমহালের দখল নিয়েও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্খা ব্যক্ত করছেন। উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কসমা বিল নামের ওই জলমহাল শিবরামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা নিয়েছে। কিন্তু উপজেলার রতনশ্রী গ্রামের শাহীনুর মিয়া দাবি করেছেন, এই জলমহাল নিয়ে শ্রীপুর দেবোত্তর স্টেইটের উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞাও আছে। শ্রীপুর দেবোত্তর স্টেইটের সেবাইত তাকে (শাহিনুর মিয়াকে) ইজারা দিয়েছে। এই দুইপক্ষ গত কয়েকদিন ধরে জলমহালে দখলে যাবার চেষ্টা করছে। তাহিরপুর থানার ওসি মো. আব্দুল লতিফ তরফদার বললেন, বিষযটি নিয়ে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। জলমহাল দখল এবং মাছ ধরা নিয়ে উত্তেজনা আছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, কে বৈধ- কে অবৈধ এটি দেখবেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় সেজন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। দোয়ারাবাজারের বন্দেহরি জলমহালের দখল নিয়েও স্থানীয় দুটি পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, জেলায় ২০ একরের উপরের ৪১১ টি জলমহালের মধ্যে ৩ টি ইজারা হয় নি। ৪৪ টি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে খাস কালেকশন দেওয়া হয়েছে। ২০ একরের নীচের ৬২৪ টি জলমহাল উপজেলা পরিষদ থেকে ইজারা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, জলমহালগুলোর মামলা মোকদ্দমা নিস্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সকল ইউএনও এবং থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া আছে। ধর্মপাশার সুনই বিলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা আছে।
Leave a Reply