বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) ও সদর-৬ আসনের উপনির্বাচনে সিংহ প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল আলোচিত কনটেন্ট নির্মাতা আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলম। তিনি বলেছেন, এবারও আমি সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। যদি আমাকে দেওয়া হয় তাহলে সিংহ প্রতীক নিয়েই ভোট করব।

বৃহস্পতিবার (৫ই জানুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এর নিকট মনোনয়নপত্র জমার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গত সোমবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুই আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন হিরো আলম।

মনোনয়ন ফরম জমা শেষে হিরো আলম বলেন, বগুড়া-৪ ও ৬ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আশা করছি নির্বাচনের পরিবেশ খুব সুষ্ঠু থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করে হিরো আলম বলেন, যেহেতু আসন সংখ্যা খুবই কম, এজন্য প্রতিটি কেন্দ্রে যাতে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় যেন ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন।

এর আগের উপনির্বাচনে হামলার শিকারের কথা জানিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে হিরো আলম বলেন, গত নির্বাচনে আমার ওপর যেভাবে হামলা হয়েছিল সেটা যেন না হয়, এজন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভোট নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী বা কীভাবে কাজ করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, প্রচারের ক্ষেত্রে মাইকসহ ডিজিটাল মাধ্যম অনলাইনেও আমরা এবার জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাবো। প্রচারণায় চমক থাকতে পারে।

সবাই বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে আপনি এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কতটা আশাবাদী প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, যার দলে সেই রাজা। আমিও আমার দল থেকে রাজা হতে চাই। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী নাকি দুর্বল এসব নিয়ে আমি ভাবছি না।

দুই আসনের নির্বাচনি প্রচার কীভাবে করবেন তা জানিয়ে হিরো আলম বলেন, যেহেতু আমি বগুড়া-৪ ও ৬ আসন থেকে এবার নির্বাচন করছি, তাই আমরা একদিন বগুড়া, একদিন নন্দীগ্রাম কাহালু এভাবেই প্রচারণা চালিয়ে যাবো।

দুটি আসনের মধ্যে কোন আসনে বেশি জনপ্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, আমি সব আসনেই জনপ্রিয়তা বেশি পাই। যদি জনপ্রিয়তা না পেতাম তাহলে ভোট করতাম না।

বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা হিরো আলম একসময় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ) করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে থাকেন। এতে নিজ এলাকার লোকজনের কাছে জনপ্রিয়তা তৈরি হয় তার। সে জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে পর পর দুবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন।

২০১৬ সালে তিনি ‘হিরো আলম’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্যগুলো ছড়িয়ে দেন। ইউটিউবেও সরব হন তিনি।

সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা হিরো আলম ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর ‘হামলা’ চালায়। এর প্রতিবাদে তিনি ওইদিন দুপুর ২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, সিংহ প্রতীকে ভোট পড়ে ৬৩৮টি।

দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ আসনের বিএনপি দলীয় দুই সংসদ সদস্য ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর নির্বাচন কমিশন আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে। ১৮ ডিসেম্বর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আসন দুটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।