1. Aktarbd2@ichamotinews.com : ichamotinews : ichamotinews
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
গোলাপগঞ্জের সেই ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল ভাঙতে এবার গণশুনানি - ইছামতী নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

গোলাপগঞ্জের সেই ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল ভাঙতে এবার গণশুনানি

শাহেদ আহমদ | স্টাফ রিপোর্টার | সিলেট
  • Update Time : Friday, 20 January, 2023
  • ৯৭ Time View

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের বাউসী এলাকার দেওরভাগা খালের ওপর প্রায় ২শ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি পুল (সেতু)। তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশনায় নির্মিত সেতুটির নাম হয় ‘দেওয়ানের পুল’। ঐতিহাসিক সেতুটির ওপর অতি সম্প্রতি আছড়ে পড়ে ‘উন্নয়নের বুলডোজার।

শুক্রবার (২০শে জানুয়ারি) তবে সংবাদমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা আর পরিবেশবাদীদের বাধায় আটকে যায় সেতুটি ভাঙার কাজ। কিন্তু এবার সেতুটি ভেঙে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগে গণশুনানি করতে চাইছে সিলেটের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। গণশুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী রোববার (২২ জানুয়ারি)। এলজিইডি, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর গত ১৫ জানুয়ারি একটি নোটিশ দিয়েছেন। সেই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন হেতিমগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কের ৫৫০মি. চেইনেজে এলজিইডি পুরাতন ব্রিজটি (দেওয়ানের পুল) ভেঙে আধুনিক যুগোপযোগী ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেন।

এ প্রেক্ষিতে কয়েকটি পত্রিকায় ব্রিজটি না ভাঙার অুনরোধ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য মানববন্ধন করেন। বিষয়টি সরকারের গোচারীভূত হলে স্থানীয় লোকজনের মতামত গ্রহণের জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।’ এই গণশুনানি আগামী রোববার দেওয়ানের পুল সংলগ্ন রাস্তায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা অবধি অনুষ্ঠিত হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সম্পদ। এই পুল ভাঙ্গার আগে অবশ্যই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সিলেটভিউকে বলেন, ‘দেওয়ানের পুল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।

এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এই পুল ভাঙার অধিকার তো এলজিইডির নাই! প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও এই পুল ভাঙার অনুমোদন দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদে ভাঙার হাত দিয়ে জড়িতরা অপরাধ করেছেন। এখন তাদের যাতে শাস্তি না হয়, সেজন্য তারা সাজানো নাটক শুরু করেছেন। ভাড়াটে লোক ডেকে ও ঠিকাদারের লোকদের দিয়ে পুলটি ভাঙার পক্ষে মানববন্ধন করানো হচ্ছে। এখন নাকি এলজিইডি গণশুনানি করবে! গণশুনানি তো পুল ভাঙার আগে করার কথা ছিল, এখন কেন করবে! এটাও একটা পাতানো খেলা, দেখা যাবে নিজেদের লোকদের দিয়ে গণশুনানিতে পুল ভাঙার পক্ষে মতামত নিয়ে আসবে। কিন্তু এই পাতানো খেলা বন্ধ করতে হবে। ঐতিহাসিক, প্রাচীন স্থাপনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।’ জানা গেছে, মোগল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে আনুমানিক ১৭৪০ সালে অল্পকালের জন্য শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হন গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)।

তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে আসেন। ওই সময়ে বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান এবং সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন শমসের খান। দেওয়ান গোলাব রাম ছিলেন খুবই ধর্মপ্রাণ। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি দেখতে শ্রীহট্ট থেকে হেঁটে রওয়ানা দেন। বাউসী এলাকার দেওরভাগা খালে গিয়ে তিনি আটকে যান। পরে নৌকাযোগে সে খাল পার হয়ে গোলাব রাম যান শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি দেখতে। পরে তার নির্দেশে সেখানকার মন্দির মেরামত করা হয়। মন্দিরে যাতায়াত সহজ করতে একটি সড়ক ও খালের ওপর একটি পুল নির্মাণের নির্দেশ দেন তিনি। দেওরভাগা খালে নির্মিত সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, দেওয়ানের পুল ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা হারানোয় পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। পুরোনো সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। একই জায়গায় ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। গত ডিসেম্বরের শেষদিকে দেওয়ানের পুল ভাঙার কাজ শুরু করে এলজিইডি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুরু হয় সমালোচনা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সদস্যরা সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে ২৮ ডিসেম্বর পুল ভাঙার কাজ স্থগিত করে এলজিইডি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *