বগুড়া জেলার গাবতলি উপজেলার তল্লাতলা গ্রামের মোঃ পিন্টু মিয়া, পিতা মোঃ গেদা মিয়া—এক সময়ের টাউট ও বাটপারের পরিচয়ে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তার বেড়ে ওঠা হয় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। বাবার অভাব-অনাটনের সংসার সামলাতে গিয়ে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে তরনীহাট অগ্রণী ব্যাংকে মাষ্টার রুলে পিওনের চাকরি নেন।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি তার কৌশলী জীবন। ব্যাংকে যাতায়াতকারী বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে গড়ে তোলে সুসম্পর্ক। চায়ের আড্ডা, স্থানীয় প্রোগ্রাম—সবখানেই পিন্টুর সরব উপস্থিতি তাকে দ্রুত আওয়ামী রাজনীতির ছায়ায় নিয়ে আসে। উল্লেখযোগ্যভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা শাহনেওয়াজ জ্যাকি ও ইউনুস আলী ফকিরের ঘনিষ্ঠ বাহক ছিলেন তিনি। এরপর শুরু হয় তার ‘সব সম্ভবের রাজনীতি’। এলাকায় ভাতা বিক্রি, বিচার শালিশ, জমি দখল, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সব কিছুতেই পিন্টুর দাপট। ব্যাংকে সুন্দরী কোনো মেয়ে এলেই শুরু হতো তার আরেক অধ্যায়—চাকরির আশ্বাসে মোবাইল নাম্বার আদায় করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রাজনীতিতে তার মোড় ঘুরে যায় হঠাৎ করেই, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যায়। তখনই পিন্টু আওয়ামী লীগের ‘কোণঠাসা কর্মী’ থেকে হয়ে যান বিএনপির উদীয়মান নেতা। যদিও তার সঙ্গে সবসময়ই বিএনপির নেতাদের ‘ব্যবসায়ী’ সম্পর্ক ছিল। কারণ, বিএনপির অনেকেই পিন্টুর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ছায়ায় সুবিধা আদায় করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে তল্লাতলা দাখিল মাদ্রাসার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় আসেন পিন্টু। বিএনপির নামধারী কিছু নেতা টাকা নিয়ে তাকে সমর্থন দেন সভাপতি পদের জন্য। যদিও শুরুতে ব্যর্থ হন, শেষমেশ ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাদ্রাসার সভাপতি হয়ে ওঠেন। মূল টার্গেট—নিয়োগ বানিজ্য। এখন তিনি মাদ্রাসা সভাপতি, আবার এলাকাব্যাপী পরিচিত ‘বিএনপির বড় নেতা’ হিসেবে।
সামনে নিয়োগকে কেন্দ্র করে নেতাদের তেল দেওয়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সবাই চায় পিন্টুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে—না হলে হাতছাড়া হবে লক্ষ লক্ষ টাকার ‘সুযোগ’। তবে এসব দেখে বিএনপির রাজপথের আদর্শিক ও চেতনায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন। তাদের মতে, দলের আদর্শ নয়, এখন ‘ধান্দা’ই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে—আর তার প্রতিচ্ছবি এই পিন্টু। রাজনীতির এই রঙ বদলানো চরিত্র আমাদের সমাজের এক বাস্তব রূপ। যেখানে চাওয়া-পাওয়ার খেলা, ব্যক্তিস্বার্থ আর ধান্দাবাজিই হয়ে উঠেছে প্রাধান্যপূর্ণ। পিন্টু কেবল একজন ব্যক্তি নয়, তিনি সময়ের প্রতিচ্ছবি।
Leave a Reply