এখনো শহীদ পিতার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে অবুঝ দুই সন্তান। ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন চরমে তখন ঢাকার সাভারে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের উদ্দেশ্যে অবুঝ ২ শিশু সন্তান, স্ত্রী ও বিধবা মায়ের কথা অমান্য করে সরকার পতনের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শহীদ হোন বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের পঞ্চদশ গ্রামের যুবক রনি মিয়া (২৭)।
মঙ্গলবার ( ৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানা যায়,রনি পেশায় একজন রিক্সাচালক। জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে ও একমাত্র বিধবা মায়ের হাল ধরতে ঢাকার সাভারে গিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে অটো রিক্সা চালাতেন রনি। পাঁচ বছর আগে রনির পিতা দিলবর হোসেন স্ট্রোক করে মারা যান। তারপর থেকেই পুরো সংসারের হাল ধরেছিলেন রনি। বিধবা মা, স্ত্রী ও দুই অবুঝ সন্তান ইয়াসিন ও ইভানকে নিয়ে রনির অভাবের সংসার কোন হলে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনে যখন সমগ্র ঢাকা উত্তপ্ত তখন মা ও স্ত্রীর আদেশ অমান্য করে স্বাধীন একটি নতুন রাষ্ট্রের আশায় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে রনি। দুপুরের খাবারের জন্য একমুঠো চাল ছিল না। তার স্ত্রী পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য রনিকে তাগাদা দেয়। কিন্তু তার চোখে মুখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। সে নতুন দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য।
কিন্তু ২০শে জুলাই শনিবার দুপুরের পর রনি বাড়ি থেকে বের হয় আন্দোলনের জন্য। সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততায় এবং তৎকালীন পুলিশের ছোড়া গুলি এসে রনির বুকে বিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় রনি পিচ ঢালা রাজপথে গড়িয়ে পড়ে। রনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। চিকিৎসক রনিকে মৃত ঘোষণা করে। রনির পরিবারের সদস্যদের কাছে খবর গেলে তারা দ্রুত সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যেয়ে রনির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। শহীদ হোন রনি। রনির অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র বিধবা মা শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অবুঝ দুই পুত্র সন্তান এখনো বুঝতেই পারেনি তার বাবার দেশের জন্য জীবন দিয়েছে।
কখনো কাছে এসে “বাবা” বলে ডেকে আদর করবেনা। দেশ পুনরায় স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু রনিদের জীবনের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের জীবন হয়ে গেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিষাদময়। সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ রনি’র কবরটি শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে টাইলস দিয়ে পাকা করা হয়েছে। পাশে লাগানো হয়েছে নাম ফলক। শহীদ রনির মা শাহনাজ বেগম আমার দেশকে বলেন, রনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাত। আমি গ্রামে থাকলে আমাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতো। আমার দিন কিভাবে চলবে এ দুশ্চিন্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমার নিজস্ব কোন জায়গা, সম্পত্তি, ঘর নেই। সরকারি পুকুরের পাড়ে খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে আমি থাকি। আমার সন্তান দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, এতে গর্ব আর অহংকার করি। আর খুনী হাসিনার যেন কঠিন বিচার হয়। আমি যেন হাসিনার শাস্তি নিজ চোখে দেখে মরতে পারি।
শহীদ রনির স্ত্রী শামীমা খানম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমি সহযোগিতা পেয়েছি। কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। কিন্তু শহীদের সন্তান হিসেবে আমার দুই অবুঝ সন্তানের শিক্ষার সকল দায়িত্ব যদি সরকার নেয় তাহলে মানসিক শান্তি পাবো।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শহীদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের যদি আবাসনের প্রয়োজন হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই আবাসনের সুব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply