শিবগঞ্জে রক্তের সম্পর্ক হারালো মানবতা কলা কাটাকে কেন্দ্র করে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বৃদ্ধ পিতার উপর পৈশাচিক নির্যাতন। যেখানে রক্তের বন্ধন সবচেয়ে মমতাময়, সেখানেই যখন সেই সম্পর্ক রূপ নেয় হিংস্রতায়, তখন মানবতা চিৎকার করে ওঠে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানা যায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে ঠিক এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে—বাড়ির আঙিনায় রোপণকৃত কলা কাটাকে কেন্দ্র করে ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ পিতা নুহু মিয়ার উপর তারই ছেলে ছামছুল মিয়া, পুত্রবধূ ও নাতি মিলে চালিয়েছে নৃশংস নির্যাতন। ভুক্তভোগী নুহু মিয়া জানান, তার ছেলে ছামছুল দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ও অবাধ্য সন্তান হিসেবে পরিচিত। ছামছুল ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মিতভাবে তার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল এবং তার সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছিল। ঘটনার দিন, গত ইং ৯ এপ্রিল ২০২৫, তারিখে বাড়ির আঙিনায় কলা গাছ থেকে একটি থোড় কাটেন পিতা নুহু মিয়া।
এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছেলে ছামছুল। সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে পিতা নিষেধ করেন। এর জবাবে ছামছুল, তার স্ত্রী ও নাতি মিলে বৃদ্ধ পিতার উপর হামলে পড়ে। কিল-ঘুষি, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বৃদ্ধকে। তার শরীরজুড়ে ছেলা, ফুলা ও নীল রঙের আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। স্থানীয়দের সহায়তায় রক্তাক্ত অবস্থায় নুহু মিয়াকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল ও মানসিকভাবে আতঙ্কিত এই বৃদ্ধ আজও স্তব্ধ হয়ে আছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, নিজের গড়া সংসারে আজ আমি অনাহূত। যে সন্তানকে মানুষ করতে জীবন উজাড় করেছি, সেই আজ আমার জীবন শেষ করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোকামতলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. মাহাবুব বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এলাকাবাসী এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, এই ঘটনাটি শুধুই একটি পারিবারিক সহিংসতা নয়, বরং সামাজিক অবক্ষয়ের একটি নগ্ন প্রতিচ্ছবি। সন্তান যখন পিতার উপর হাত তোলে, তখন সমাজের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এই করুণ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পারিবারিক সম্পর্ক এখন কতটা নড়বড়ে ও সহিংসতায় জর্জরিত।
সমাজে এমন ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন পারিবারিক নৈতিকতা চর্চা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং সামাজিকভাবে সচেতন ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিকদের দৃপ্ত পদচারণা।
Leave a Reply