সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ কিছু পরামর্শ” যে সাংবাদিকেরা বেশি নজরদারির ঝুঁকিতে থাকেন, তাঁদের উচিত আদর্শ কিছু চর্চা অনুসরণ করা এবং সাধারণ কিছু তথ্য নিরাপত্তার প্রটোকল তৈরি করা, যেগুলো তাঁকে ব্যক্তিগত যোগাযোগে অবৈধ অনুপ্রবেশ থেকে সুরক্ষা দেবে। অনলাইনে নিজের ইচ্ছায় আপনি যেসব তথ্য শেয়ার করছেন, সেগুলোর ব্যাপারে আরও চিন্তাশীল হোন এবং যাচাই-বাছাই করুন। আপনার নিজস্ব লগইন, পাসওয়ার্ড ও কন্ট্যাক্ট-সংক্রান্ত তথ্য সতর্কতার সঙ্গে রক্ষা করুন। অসুরক্ষিত পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। অপরিচিত বা অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন না। বিশেষভাবে সেসব সাইটে, যেখানে সুরক্ষিত প্রটোকল ব্যবহার করা হয় না। (ব্রাউজারের ওয়েব অ্যাডড্রেস বারে তালার চিহ্ন খেয়াল করুন।) যতটা সম্ভব, এনক্রিপ্টেড চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন। যেমন সিগন্যাল বা টেলিগ্রাম। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
একই পাসওয়ার্ড একটির বেশি অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যবহার করবেন না। মাঝেমধ্যেই পাসওয়ার্ড হালনাগাদ করুন। যখনই সম্ভব, আপনার ডিভাইসটি সুরক্ষিত রাখুন এবং লোকেশন সার্ভিস বন্ধ করে দিন।
কয়েকটি বাড়তি পরামর্শঃআপনার ডিভাইস, অ্যাপ ও ব্রাউজার নিয়মিত হালনাগাদ করুন। ফিশিং বা স্পুফিং অ্যাটাকের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে বার্তা পাঠানো হয়, যা দেখে মনে হবে এটি কোনো বিশ্বস্ত সূত্রের কাছ থেকে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে আপনাকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে কোনো লিংকে ক্লিক করানোর জন্য, যেখানে ক্লিক করলে একটি ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যাবে। এগুলো সাধারণত পাঠানো হয় হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ, সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজ, ইমেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে। এসব সংযুক্ত লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। তার বদলে সেই তথ্যটি যাচাই করে নিন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে, বা এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলে নিন বার্তা পাঠানো ব্যক্তিটির সঙ্গে।
নিউজরুমের আইটি দলের উচিত ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বাড়ানো, যেন ডি-ডস হামলা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাঁরা একই সঙ্গে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ফায়ারওয়াল ও বাড়তি সার্ভার সক্ষমতাও নিশ্চিত করতে পারেন। আপনার ফোন, ল্যাপটপ বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে কী ধরনের তথ্য আছে, তা পর্যালোচনা করুন। সবকিছুর ব্যাকআপ নিন। তারপর সেসব ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট বা জিনিস মুছে দিন, যেগুলোতে আপনার, আপনার পরিবার ও সোর্স সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য আছে। সেলফোন আনলক করার জন্য টাচ আইডি বা ফেশিয়াল রিকগনিশনের মতো বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করবেন কি না, তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব ডেটায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করুন এবং আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস ডিলিট করুন। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে নিজের নাম লিখে সার্চ করুন।
পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করতে চান না, এমন কিছু খুঁজে পেলে ডিলিট করে দিন। অ্যাকাউন্টগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখুন যে, সেখানে ট্রলিং কর্মকাণ্ড বাড়ার কোনো লক্ষণ আছে কি না অনলাইন হয়রানির প্রভাব এবং ঝুঁকি নিয়ে সম্পাদক ও সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলুন। অনলাইনে হয়রানিকারীরা প্রায়ই সাংবাদিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে, তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধু মহলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা আপনার অনলাইন কর্মকাণ্ড ট্র্যাক করছে এমন সংশয় থাকলে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যখন আপনি সংবেদনশীল কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। ভিপিএন সেবাগুলোও আপনার ইন্টারনেট কর্মকাণ্ড রেকর্ড করতে পারে। ফলে কোন ভিপিএন সেবা ব্যবহার আপনার জন্য ভালো হবে, তা ভালোমতো দেখে নিন। “আটক বা গ্রেপ্তারের মতো পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে” আগেভাগেই আপনার ডিভাইস ও ডেটা সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিন। এতে আপনার বা আপনার সোর্সের তথ্য অন্য কারও হাতে পড়ার আশঙ্কা কমবে।
আপনার ডিভাইসের কোথায় কোন ডেটা, নথি ও ছবি রাখা আছে, তা মাথায় রাখুন। ঝুঁকিতে পড়তে পারেন, এমন ডেটা মুছে দিন। এটিও মাথায় রাখুন যে, সরকারি কর্তৃপক্ষ বা অপরাধী গোষ্ঠী আধুনিক অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব মুছে দেওয়া তথ্যও ফিরিয়ে আনতে পারে। ফলে নিয়মিত আপনার ব্রাউজিং হিস্টরি মুছে ফেলুন, এবং সব অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত লগআউট করুন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত করে দিন।
সব কটি অ্যাকাউন্টে (বিশেষ করে ইমেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া) কী কী কন্টেন্ট আছে, সেগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। জেনে নিন: কোন ধরনের তথ্য প্রকাশ করলে আপনি বা অন্যরা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.fb.me/bd.ichamotinews
Leave a Reply