বগুড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিতে আট টাকা বেড়ে এখন হাফ সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই। তীব্র গরমে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের।
শুক্রবার (১৭ মে) শহরের ৩ নম্বর রেলগেট বাজার, দত্তবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। ডিম কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও ৪০ টাকা হালি দরে খুচরা পর্যায়ে ডিম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই ডিম খুচরা বাজারে ৮-১০ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। একজন ক্রেতাকে প্রতি হালি মুরগির ডিম কিনতে হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়।
পাইকারি ও খুচরা ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র গরমে খামারে মুরগি মারা যাওয়ায় ও উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারের ডিমের সরবরাহ অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। তবে মুরগির খামারিরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, প্রতিদিনের ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক আছে। বড় বড় ডিম বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জন্য ডিমের বাজার বেসামাল।
খামারিদের দাবির সত্যতা মিলেছে বগুড়ার কাহালুর মুরইল আফরিন কোল্ডস্টোরেজে। বুধবার (১৫ মে) সেখানে চার লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৮টি ডিম মজুতের সন্ধান পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় কোল্ডস্টোরেজ মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে মজুত ডিম সাতদিনের মধ্যে হিমাগার থেকে বাজারে বিক্রি করা না হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেরিনা আফরোজ।
শহরের দত্তবাড়ী এলাকার পাইকারি ডিম ব্যবাসয়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া জেলাজুড়ে প্রতিদিন (লাল) মুরগির ডিমের চাহিদা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ পিস। বর্তমানে সেখানে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ পাচ্ছেন তিন লাখ পিসের মতো। আজ শহরে পাইকারী ব্যবসায়ীরা প্রতি ১০০ পিস ডিম খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এক হাজার ৮০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। ডিম বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের কাছ থেকে তাদের এই ১০০ পিস ডিম কেনা পড়েছে এক হাজার ৫০ টাকা করে। খুচরা ব্যবসায়ীরা মুদি দোকানে ১০০ পিস ডিম ১২০ টাকা লাভে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
দত্তবাড়ী এলাকার পাইকারি ডিম বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান সেলিম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সুমন বলেন, দিনে আমাদের ডিমের চাহিদা প্রায় ৫০ হাজার পিস। সেখানে সরবরাহ পাচ্ছি মাত্র ২৫-৩০ হাজার পিস।
উপশহর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমরা হালিপ্রতি দুই টাকা লাভ রেখে বিক্রি করে দেই। সপ্তাহখানেক আগেও ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকা, সেখান থেকে ৪৪ ও এখন ৪৮ টাকা হালি খুচরা পর্যায়ে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
শহরের ৩ নম্বর রেলগেট এলাকায় ডিম কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক আক্কাস আলী বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই ডিম একমাত্র আয়ত্তের মধ্যে পুষ্টির চাহিদা মেটায়। এখন দামের যা অবস্থা ডিম খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে। সপ্তাহের ব্যবধানে হালিপ্রতি দাম ৮ টাকা বাড়ে কীভাবে? এইটা সিন্ডিকেট ছাড়া আর কী? প্রশাসনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।’
একই এলাকার ঊর্মি ডিম ঘরের স্বত্বাধিকারী রতন মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন দোকানে ডিমের চাহিদা থাকে প্রায় চার হাজার পিস। সেখানে ডিম পাচ্ছি আড়াই হাজার পিসের মতো। শুনেছি মুরগি মরে গিয়ে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। সত্য-মিথ্যা বড় বড় ব্যবসায়ীরাই ভালো জানেন। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামে বিক্রি করি।
সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকার মুরগির খামারি আবু মোত্তালেব মানিক বলেন, আবহাওয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুকূলেই আছে। মুরগির খাবারের দাম কিছুটা বেশি। তবে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়া অজুহাত ভুয়া। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জন্য বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে।
এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ডিম মজুত করে যারাই সিন্ডিকেটের চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকালও একটি কোল্ডস্টোরেজকে জরিমানা করা হয়েহে। জেলার সব ইউএনওকে ডিমের সিন্ডিকেট থামাতে সবগুলো কোল্ডস্টোরেজে অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই কাউকে ডিম মজুতের সুযোগ দেওয়া হবে না।
Leave a Reply