মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার – ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে একটি শিমুলগাছ। বিকেলের সোনালি রোদে গাছের ডালে ডালে পানকৌড়ির পালক জ্বলজ্বল করছে। একটি গাছে একসঙ্গে এত পানকৌড়ি দেখে শতব্যস্ততার মধ্যেও অনেক পথচারী একটু দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছেন। আর তা দেখে প্রাণ জুড়ায় ওই গাছের মালিক যাদব রায়ের। যাদব রায়ের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কেউটান গ্রামে। যাদব রায় বলেন, ‘পাখিদের সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। আর এখানে পাখি আসে বলেই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কত মানুষ দেখতে আসে। দেখে ভালো লাগে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওরা যখন চলে যায়, তখন বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আবার যখন ফিরে আসে তখন বুক ভরে যায়। পাখির কারণে ক্ষতি হলেও, সব ক্ষতি আমি নিয়েছি মেনে।’ সরেজমিনে দেখা গেল, কুলিক নদীর পাশে সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে আছে একটি শিমুলগাছ। শিমুলগাছের ডালে ডালে শুধু পানকৌড়ি আর পানকৌড়ি। কত যে পানকৌড়ি, তার হিসাব নেই। পানকৌড়ির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। আর এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেছে অনেক মানুষ। আর এই পাখিগুলোর নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে গাছটি। পাখিগুলোর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। পাখিগুলো দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। তবে স্থানীদের অভিযোগ, আগের মতো এবারে একটু কম দেখা মিলছে এই পাখিদের। কারন ইদানিং কিছু মানুষ হাতে বন্ধুক নিয়ে এসে পাখিগুলো শিকার করছেন। পাখিগুলো শিকার না করার জন্য বলা হলেও তারা কোন কথা শোনে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সাথে পানকৌড়ি পাখি শিকার বন্ধ করার দাবী জানান স্থানীয়রা। কেউটান গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইমলাম বলেন, রাতে পাখিগুলো শিমুল গাছটিতেই থাকে। সকাল হলেই পাখিগুলো বেড়িয়ে পড়ে খাদ্যের খোঁজে। আবার সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসে গাছটিতে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এই পানকৌড়ি পাখিগুলো শিমুল গাছটিকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে বাস করছে। এক সময় এ গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে পাখি ছিল। কিন্তু পাখি শিকারীদের কারণে তার সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। ঠাকুরগাঁওয়ের পাখিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী বলেন, পাখিগুলোর কারণে যেমন এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাই পানকৌড়ি পাখিগুলো শিমুল গাছটি যেন নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান সেলিম জানান, পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখে। তাই পাখিদের প্রতি সকলকে সহনশীল হতে হবে। পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply