1. Aktarbd2@ichamotinews.com : ichamotinews : ichamotinews
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
পুতিনের বিজয় সংকেত ও উহানের সুবাতাস - ইছামতী নিউজ
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট নিউজ :
বগুড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে আট টাকা সদরের মথুরা পশ্চিমপাড়া আল মদিনা জমে মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন কাজের উদ্বোধন শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ, বাদ হতে পারে নিপুণের আবার হিট অ্যালার্ট জারি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গ্রাম পুলিশদের – গ্রাম আদালত বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত বগুড়ায় বন্ধুর হাতে প্রাণ গেল বন্ধু তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে করনীয় চলতি মাসেই আরেক দফা দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প -এর আওতায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে গ্রাম পুলিশদের নিয়ে ‘গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক’ দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয় পাবনা আটঘরিয়ায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ শুরু

পুতিনের বিজয় সংকেত ও উহানের সুবাতাস

Reporter Name
  • Update Time : Thursday, 13 August, 2020
  • ২৫২ Time View

প্রাণসংহারী করোনাভাইরাস যখন তরতর করে বিজয়ের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে, ঠিক এমন সময় পুতিন যেন ‘খামোশ’ বলে পথ আগলে দাঁড়ালেন। রূপান্তরে সুপটু এই ভাইরাস গত কয়েকটি মাসে খেল তো আর কম দেখাল না! দুনিয়াজুড়ে তার অশুভ ছোঁয়ায় দুই কোটির বেশি মানুষ সংক্রমিত। শুধু অসুস্থতা দিয়েই মানুষকে এই প্রায় অদৃশ্য ভাইরাস নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে, তা তো নয়। জীবন-জীবিকা অচল হওয়ায় দেশে দেশে অর্থনীতিতে নেমেছে ধস। বিশ্বের নানা প্রান্তে কোটি কোটি মানুষের পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে।

নাছোড়বান্দা এই ভাইরাসের বেপরোয়া দৌড়ের সামনে গত মঙ্গলবার যেন দুই আঙুলের ‘বিজয় চিহ্ন’ নিয়ে দাঁড়ালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, রাশিয়াই প্রথম করোনাভাইরাস ঠেকানোর টিকা উদ্ভাবন করেছে। এটি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়েছেন পুতিন। বলেছেন, এই টিকা তাঁর মেয়ের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সে ঘোষণা অনুযায়ী, এই টিকার রয়েছে ‘করোনা প্রতিরোধের টেকসই’ ক্ষমতা।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘স্পুটনিক–৫’ নামের এই টিকা উদ্ভাবন করে দেশটির গামালেয়া রিসার্চ ইনসস্টিটিউট। সংবাদ মাধ্যমে এই টিকার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘আমি জানি যে এটা পুরোটাই কার্যকর। এর প্রতিরোধ ক্ষমতা টেকসই।’

রাশিয়ার সরাসরি বিনিয়োগ তহবিলের প্রধান কিরিল দমিত্রিয়েভ নিজেও এ টিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি যে এটা কাজ করছে। এ টিকা আমার মা–বাবা আর স্ত্রীও নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, তাই বলে যে কালকেই এ টিকা এক কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, তা নয়। পর্যায়ক্রমে পৌঁছাবে।

তাড়াহুড়ো করে রাশিয়ার এই টিকা ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা অবশ্য সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, কোনো ভাইরাসের টিকা ছাড়ার ক্ষেত্রে সুচারুভাবে যেসব বিধি ও নিয়ম মেনে চলা হয়, রাশিয়ার টিকা বা ভ্যাকসিনের বেলায় তা হয়তো পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি। টিকাটি অনুমোদনে কাটছাঁট করে সংক্ষিপ্ত পথ অনুসরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবারই ‘স্পুটনিক–৫’ টিকার কার্যকারিতার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি। তাঁর সন্দেহ অতি গভীর। এবিসি নিউজকে ফাউসি বলেছেন, ‘রাশিয়া বলছে, এই টিকা নিরাপদ এবং এর কার্যকারিতা প্রমাণিত। এ নিয়ে আমার প্রবল সন্দেহ রয়েছে। টিকা হাতে পাওয়া আর তা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ করা দুটি ভিন্ন জিনিস।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও রাশিয়ার করোনা টিকার বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘একটি টিকা উৎপাদন পর্যায়ে যাওয়ার আগে তা নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগোতে হবে। এখানে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না।’ এমন বিবৃতি দেওয়ার কারণও আছে বটে। পুতিন যখন তাঁদের স্পুটনিক টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সাড়ম্বরে ঘোষণা দিলেন, এ সময় তাঁর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আবার বলছে, এই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনো শেষ হয়নি। দুই হাজারের বেশি লোকের ওপর শেষ ধাপের পরীক্ষা বুধবারই শুরু হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভা অফিসের মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেছেন, এই টিকার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। তিনি এ কথাও বলেন, স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের সিলমোহর পেতে আরও সময় লাগবে এ টিকার। এত তাড়াহুড়ো করে হবে না।

রাশিয়ার এ টিকা নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন, এর মধ্যে ২০টি দেশ থেকে টিকার ফরমাশ পেয়েছে তারা। সে অনুযায়ী তৈরি হবে শত কোটি ডোজ। করোনার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রতিষেধক নতুন টিকার আগমনের ক্ষেত্রে এমন আলোচনা–সমালোচনা হবেই। নতুন আসা টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা বা কার্যকারিতার বেলায় কমবেশি ঘাটতি থাকাও বিচিত্র কিছু নয়। তবে তা সীমিত পর্যায়ে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। টিকা যদি রোগ প্রতিরোধ করতে গিয়ে এমন উপসর্গ বাধায়, টিকা গ্রহণকারীর বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, সেখানে এ টিকার দরকার নেই। এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি করোনার মতো জটিল ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একেবারে নিখুঁত টিকা আশা করাটাও বাহুল্য। তাই এ মুহূর্তে নিখুঁত না হলেও ব্যাপকভাবে কার্যকর টিকার প্রয়োজন। করোনা ঠেকাতে পারে, অন্তত এমন টিকাটা জরুরি। করোনাকে ঠেকাতে হবেই। কাজেই টিকা আসুক।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে রাশিয়া ‘স্পুটনিক’ নামের কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ অভিযানে অগ্রদূত বলে অমর হয়ে আছে। সেই উপগ্রহের নামানুসারেই করোনার টিকার নামকরণ হয়েছে ‘স্পুটনিক–৫ ’। এটাই করোনার প্রথম কার্যকর টিকা বলে দাবি করছেন পুতিন। তাঁর এ দাবি সত্যি বলে প্রমাণিত হলে তা হবে দুনিয়াজুড়ে করোনার দৌরাত্ম্যের মুখে এক অবিস্মরণীয় বিজয় সংকেত।

করোনার টিকার পরীক্ষার তৃতীয় ও শেষ ধাপে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রার্থী। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনের সিনোভাক বায়োটেক টিকার পরীক্ষা। ‘করোনাভ্যাক’ নামের এই টিকা এর মধ্যে ব্রাজিলের ৯ হাজার মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় মানবদেহে এর শেষ ধাপের পরীক্ষা সফল হলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তৈরি হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সারা বিশ্বে এখন ১৬৫টি প্রতিষ্ঠান করোনার টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছে। এর মধ্যে ৬টি পরীক্ষার তৃতীয় বা শেষ ধাপে রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে খুব শিগগিরই বা দু–একমাসের মধ্যে এক বা একাধিক করোনার টিকা আসতে যাচ্ছে করোনার নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তার মধ্যে একটুখানি স্বস্তির পরশ দিতে।

স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে অন্যভাবেও। বিশ্বের অনেক দেশেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা যদিও এখনো বাগে আসেনি, ইউরোপের অনেক দেশেই করোনা নিয়ন্ত্রণে। দু–তিন মাস আগেও ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সে করোনায় অনেক মানুষ মারা গেছে। এখন তা সীমিত পর্যায়ে। সুইডেন লকডাউন ছাড়াই করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড করোনা নিয়ন্ত্রণে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে টানা ১০২ দিন পর অকল্যান্ডে নতুন করে কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত বলে দুজনের শনাক্ত হওয়া। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। তিন তিনের লকডাউনে গেছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা করোনা আশানুরূভাবে ঠেকাতে পেরেছে। অবশ্য ভুটান মঙ্গলবার প্রথম বারের মতো করোনা বিষয়ক লকডাউনে গেছে। এসব দেশে বেশির ভাগই মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে করোনা প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ মাস্ক ব্যবহারে কঠোর আইন করেছে।

সব সমালোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু চীনের উহান শহরের পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। উহানে এখন ইলেকট্রনিক সংগীত উৎসবে দলবেঁধে নাচতে দেখা যায় দর্শক–ভক্তদের। সকালের নাশতার স্ট্যান্ডগুলোতে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। শহরে যানবাহন চলাচলে কঠিন জট। অথচ গত জানুয়ারিতে এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যেত না। ওই সময় উহানে সতেজে হামলে পড়েছিল করোনা। টানা ৭৬ দিন টানা লকডাউনের পর এপ্রিলে তা তুলে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নানা রকম পোশাক ও সরঞ্জাম কঠোরভাবে ব্যবহার করে আসছে উহানের মানুষ। ব্যবসা–বাণিজ্য, কেনাকাটা, বিনোদন—সবই চলছে, তবে তা স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে। ১ কোটি ১০ লাখা মানুষের নগর উহান নতুন করে আবার জেগে উঠতে শুরু করেছে। সেখানে অর্থনৈতিক দৈন্য এখনো গ্যাঁট হয়ে আছে। বিক্রিবাট্টা মন্দা। নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই এখনো আগের পর্যায়ে নেই। তবু অনাহূত ভাইরাসের মরণ ছোবল থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে উহান। এই সুবাতাস দুঃময়ের ধাক্কা সামলে নতুন করে দাঁড়াতে অনেকের মনে উৎসাহ জোগাবে।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি, সিএনএন

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *