নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ৬নং কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রামগুলো থেকে হত দরিদ্র গরীব অসহায় খেটে খাওয়া ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর দেওয়ার নাম করে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দু’বছর পার হওয়ার পরও যখন ভুক্তভোগীরা ঘর পাচ্ছে না তখন তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবীতে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৩৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। সারা দেশের হতদরিদ্র গরীব অসহায় খেটে খাওয়া ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে বিনা খরচে পাকঘর নির্মাণ করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
গত বছর এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এই ঘরগুলো চলতি বছর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সেই প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নাম করে এই ইউনিয়নের সকল গ্রাম থেকে প্রায় ৩ শতাধিক সুবিধা ভোগীদের কাছ থেকে ৪০,৫০ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। এতে করে স্থানীয় মেম্বারদের সহায়তায় চেয়ারম্যান প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গবাদিপশু বিক্রি করে বা একমাত্র ফসলের জমি বন্দক রেখে, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে স্ব স্ব এলাকার মেম্বারদের মাধ্যমে আবার সরাসরি চেয়ারম্যানকেও টাকা দিয়েছেন অভিযোগকারীরা। শুধু মেম্বারই নয় পরিষদের গ্রাম পুলিশের মাধ্যমেও কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। টাকা নেওয়ার সংখ্যায় ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রাম থেকে রাতোয়াল নামক গ্রামে এই সংখ্যা অনেক বেশি। এই গ্রামের ১৩ জন ভুক্তভোগী তাদের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সাংসদের সুপারিশ নিয়ে চলতি মাসের ২২তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রাতোয়াল গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন রাজু বেশি সংখ্যক মানুষকে ঘর দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুজ্জামান আকন্দ রুবিন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বার হাফিজা চৌধুরীও কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে জানা যায়। টাকা নেওয়ার প্রায় ২বছর পার হয়ে গেলেও যখন সুবিধাভোগীরা ঘর পাচ্ছেন না তখন তারা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘর আসছে-আসবে বলে কালক্ষেপণ করেন। এছাড়াও তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন।
এতে করে এই মানুষরা যখন বুঝতে পারে যে তাদের ভাগ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর নেই তখন তারা টাকা ফেরতের আশায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী এই মানুষরা আর প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর চান না তারা এখন তাদের দেওয়া টাকা ফেরত চান। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়াসহ অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার নামেও টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছে অনেকেই।
রাতোয়াল গ্রামের শৈলগাড়িয়া পাড়ার ভুলু মৃধার ছেলে ভ্যানগাড়ি চালক মমতাজ হোসেন বলেন পাকা ঘর দিবে এমন প্রলোভন দিয়ে চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু রাতোয়াল বাজারে মজিদের চা স্টলে আমার কাছ থেকে ৪০হাজার টাকা নিয়েছে। প্রায় ২বছর পার হলেও চেয়ারম্যান এখনো আমাকে ঘর দিতে পারেনি। আমি আর ঘর চাই না আমি টাকা ফেরত চাই।
১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন রাজু মুঠোফোনে বলেন, চেয়ারম্যান বলে ছিল সরকারের পক্ষ থেকে পাকা ঘর দেওয়া হবে। এই ঘর পেতে হলে খরচ হিসেবে কিছু টাকা দিতে হবে। তাই আমি যারা ঘর নিতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে খরচ হিসেবে কিছু টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিয়েছি।
২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুজ্জামান আকন্দ রুবিন বলেন, আমি পাকা ঘর দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। আর ঘর দেওয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না। কেউ বলতে পারবে না যে আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর হাফিজা চৌধুরী বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে ৪ জনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানের হাতে দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে ঘর বিষয়ে কোন টাকা নেই।
পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মণ্ডল বলেন, কতিপয় কিছু ব্যক্তি ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার কানে এসেছে। যদি আমাকে কেউ টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানায় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, পাকা ঘর দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার বিষয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সরকারের ভিশনকে বাস্তবায়ন করার সুযোগে যে সব জনপ্রতিনিধিরা এই রকম অসৎ উপায় অবলম্বন করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আয় করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটিই আশা স্থানীয়দের।
olwpan 08860de5f7 https://wakelet.com/wake/nNaUWlQAjniF8HQ0T5QBy