নিউজডেস্ক | ইছামতী নিউজ.কম
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তুলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন যখন সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যাবে, একসঙ্গে ক্লাস করবে, সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লর করবে, ঠিক তখন মা ও মামার হাত ধরে তাকে আসতে হয়েছে আদালতে এবং অপেক্ষা করতে হয়েছে জামিনের জন্য।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের একটি মামলায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আট বছর বয়সী চয়নকেও আসামি করা হয়। আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।
এ মামলায় চয়নের পরিবার বুধবার পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠান। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে শিশু আবদুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন এবং তার ১৭ বছর বয়সী বোন তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন। এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শিশু চয়নের আইনজীবী মো. সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মারা যাওয়ার পর জনৈক মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করেন। মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে ওই বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর। প্রকৃত পক্ষে জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী চয়নের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৩। এ ছাড়া চয়নের বোন তুলাতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইমরোজ তৃপ্তির বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চয়নের মা, দাদিসহ ওই মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা হাজির হন। বুধবার আসামি শিশু চয়ন ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মইনুল হক তাৎক্ষণিক আসামি শিশু চয়ন ও তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন এবং বাদীর পক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোহসীন উদ্দিন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি আদালতে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
শিশু চয়নসহ আটজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়, চয়নের বাবা মরহুম মাসুম তালুকদার কলাপাড়া উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় ১২ একর জমি বিক্রি করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা নিলেও মৃত মাসুম তালুকদার জমির দলিল প্রদান করেননি। এর প্রেক্ষিতে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মামলাটি দায়ের করা হয়। বাদী মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৮নং ওয়ার্ডের টাউন কালিকাপুর এলাকার মিরাজ ভবন বাসিন্দা এবং তিনি আবদুর রব হাওলাদারের ছেলে।
এদিকে শিশু আবদুল্লাহ আল ইসলাম চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের হয়রানি ও জমি-জমা দখলের জন্যই এই ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.facebook.com/ichamotinews.it/
Leave a Reply