কয়েকদিন পরেই পাকা ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। পরিশ্রম করে বোনা ফসল ঘরে উঠাবেন।সারের অভাব দূর হবে সে স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও হঠাৎ করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি কেড়ে নেয় তাদের মুখের হাসি।তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলার হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়া এসব কৃষকের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ।
শুক্রবার(৮ই এপ্রিল-২২) জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এক লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করা হয়। এর মধ্যে হাওর এলাকায় আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ২ হেক্টর জমিতে। সরেজমিন দেখা যায়, পানিতে থাকা আধা পাকা ধান কাটছে কৃষকরা। তাদের চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। যে ধান কাটা হচ্ছে তার বেশিরভাগই কাজে লাগবে না। তবু উপায় না থাকাই এসব ধান কাঁচা কাটতে হচ্ছে তাদের। নদীর দু’পারে ধানি জমিগুলোর কোনটি তলিয়ে গেছে আবার কোনটির শীষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পানি। একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন, এক কানি প্রতি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা।
কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, অনেক ধার দেনা করে ২০ কানি জমিতে বিয়ার আটাশ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচশ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে ফেলায় এখন এক থেকে দেড়শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।অপর কৃষক ইউসুফ মিয়া বলেন, কানি প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কৃষক ইসমাইল মিয়া বলেন, প্রতিবছর চলতি সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েক হাজার কানি ধানি জমির ফসল হুমকির মুখে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ তারেক বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আউশ আবাদ প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে কিছুটা সময় লাগবে। অন্যদিকে কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাসিরনগরের বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি বেড়েছে। উপজেলার নাসিরপুর ও গোয়ালনগরে সব মিলিয়ে প্রায় ৭০/৮০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে পানিতে।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.fb.me/bd.ichamotinews
Leave a Reply