ফল ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনায় চলমান মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তেমন কোনো ক্ষতিতে পড়তে হয়নি লিচু চাষিদের। তাই মৌসুমের শুরু থেকেই আগাম জাতের দেশি লিচুতে ভরপুর স্থানীয় হাটবাজার। তাই রসালো লিচুর দামে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।
রবিবার (২২শে মে-২২) ছবিটি তোলা, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লিচু কিনতে আসছেন ক্রেতারা এখানে। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি লিচুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই। গত দশ বছরের মধ্যে এ বছর লিচুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে পাবনায়। তাই এই মৌসুমে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে বেশিরভাগ কৃষকের লিচুর বাগান রয়েছে। তাদের সারা বছরের আর্থিক জোগান আসে এই লিচু বাগান থেকে।
জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে এখন ভোর থেকে এই লিচু বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই হাটে এসে পছন্দ করে লিচু ক্রয় করেন। আবার অনেকেই গ্রাম ঘুরে বাগান থেকে লিচু কিনছেন।
গত দুই বছর করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার কারণে লিচুতে তেমন লাভ করতে পারেনি তারা। তবে এই মৌসুমের প্রথম থেকেই লিচুর ভালো দাম পাওয়ায় বেশ খুশি বাগান মালিক ও চাষিরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আর এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরসহ, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গড়া, ফরিদপুর উপজেলায় লিচুর আবাদ হয়ে থাকে।
ঈশ্বরদীর এক বাগান মালিক আজহার আলী বলেন, গত ১০-১২ বছরের মধ্যে এ বছর লিচুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আওতাপাড়া হাটের লিচু বিক্রেতা মোহন শেখ বলেন, দাম ভালো কিন্তু শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। শ্রমিকের মজুরি বেশি। তাই পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে লিচু ভাঙা হচ্ছে।
বাজারের প্রকার ও রঙ অনুসারে লিচুর দাম ওঠানামা করে। এক হাজার লিচু এখানে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামটা বেশ ভালো এবার। ঢাকা থেকে আসা লিচুর পাইকার কাজী মাহাবুব বলেন, ‘এ বছর লিচুর দাম বেশি। বেশি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে ক্রেতার কাছে দাম পাচ্ছি না।
অনেক সময় কমদামে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে। আঁটির লিচুর এত দাম হলে বোম্বাই লিচুর কী অবস্থা হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।’
লিচু শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এবার বাগানে বাগানে লিচু ভেঙে বেশ ভালো পয়সাই তারা পাচ্ছেন। এলাকার অনেক শিক্ষার্থীও লিচুবাগানে কাজ করছে। আছে নারীরাও।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. সাইফুল আলম বলেন, কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে পাবনা জেলার। এই অঞ্চলে ফলের আবাদও বেশ ভালো হয়ে থাকে। এর মধ্যে আম, লিচুু, কাঁঠাল অন্যতম।
এ বছর জেলায় লিচু ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম। এই মৌসুমে জেলায় প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানালেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.fb.me/bd.ichamotinews
Leave a Reply