আমাদের বগুড়ার প্রিয় মুখ প্রিয় শিক্ষক রওশন রানী, তিনি জাতীয় ভাবে প্রিয় শিক্ষক সন্মাননা-২১ পান। আমরা বগুড়াবাসী গর্বিত।
রবিবার(১লা মে-২২) সন্ধ্যায় তার বাসায় আমি অনন্যা গ্রুপ এর পক্ষ থেকে সন্মাননা ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া আপার হাতে তুলে দেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন আমি অনন্যা’র কার্যকারি কমিটির উপদেষ্টা ইয়াসমিন হাসান, উপদেষ্টা সেলিনা রহমান, সভাপতি উম্মে ফাতেমা লিসা, ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেসকত রহমান কাঁকলি, দপ্তর সম্পাদক লায়লাতুন নাজিন আঁচল।
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কেউ প্রতিষ্ঠা করেছেন দাতব্য সংগঠন, কেউ আবার দুর্গম চরে স্থাপন করেছেন স্কুল। আপন আলোর দীপ্তিতে তাঁরা হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীদের প্রেরণা, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমন ১১ জন শিক্ষককে সম্মানিত করেছে। রওশন আরাদের ছোটবেলায় মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে অত ভাবা হতো না। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর তাই মেয়েকে আর পড়াতে চাননি মা-বাবা। কিন্তু রওশন আরার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হন তাঁরা। মেয়েকে বগুড়ার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে ভর্তি করে দেন। জেদ করে দূরের বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় টিফিনের টাকাও দিতেন না বাবা। জোটেনি রিকশাভাড়াও। প্রতিদিন প্রায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসা করতে হতো। কিশোরী মেয়ের একা একা এতটা পথ পাড়ি দেওয়াটা পরিবারের অনেকে ভালোভাবে নেয়নি। শুরু হয় বিয়ের জন্য চাপ। কিন্তু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য জেদের কাছে অনড় থাকেন তিনি। শত বাধা, শত প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে ১৯৬৩ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন রওশন আরা।
কলেজে ভর্তির সময় আবার বিপত্তি বাধল। মেয়ে হয়ে ছেলেদের সঙ্গে এক কলেজে পড়াশোনা করবে, এটা মেনে নিতে নারাজ বাবা-মা। ভর্তি নিয়ে যখন চরম অনিশ্চয়তা, তখনই খবর আসে, বগুড়ার মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে। ১৯৬৫ সালে এই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন রওশন আরা। একই কলেজে স্নাতক কোর্স চালু হলে সেখানেই স্নাতকে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে বিয়ে। পরের বছর বগুড়া সিটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। স্বামী, সংসার, শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যান রওশন আরা বেগম। টানা ২৬ বছর একই প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন তিনি। শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। নানা সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রেখেছেন। বাল্যবিবাহের খবর পেলেই শিক্ষার্থীর বাড়িতে ছুটে গেছেন, ঝরে পড়া থেকে ছাত্রীদের রক্ষা করেছেন। বয়ঃসন্ধিকালে ছাত্রীদের সমস্যার সমাধানে বন্ধুর মতো পাশে থেকেছেন। ২০০০ সালে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বগুড়া জিলা স্কুলে বদলি হন রওশন আরা। ২০০৪ সালে শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানেন।
তবে আনুষ্ঠানিক পাঠদানের ইতি টানলেও আলো ছাড়ানোর পেশা ছাড়েননি রওশন আরা। ২০১৭ সালে নিজের বাড়িতেই সুবিধাবঞ্চিত এতিম শিশুদের জন্য খুলেছেন ‘সাফল্য শিশু পরিবার’। আবাসিক এই বিদ্যালয়ে তিনি ছাড়াও আছেন আরও চারজন শিক্ষক। তিন বেলা খাবার, পোশাক, বই-খাতা—সবকিছু বিনা মূল্যে পাচ্ছে শিশুরা। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে শিশুরা। প্রতিষ্ঠা করেছেন নাজমুস সাকিব ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন করছে।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.fb.me/bd.ichamotinews
Leave a Reply