আলু চাষে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই জমি তৈরি থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যন্ত জানতে হবে। মাঠে দেখা যায় কেউ আলু চাষ করে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করছেন কেউবা ক্ষতির মুখে পরছেন। পাঠক আসুন জেনে নেয়া যাক আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
চাষের মৌসুম : উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক (নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহে (নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ) চাষাবাদ করার উপযুক্ত সময় ৷
উপযুক্ত জলবায়ু : আলু নিতান্তই শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল৷ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও আলু ভালো জন্মে৷ তবে অ-নিরক্ষীয় অঞ্চলের শীতকালীন মৌসুমে যেমন আমাদের দেশে আলুর চাষ করা চলে ৷ ১৬-২১ ডিগ্রি তাপমাত্রা আলুর জন্য আদর্শ স্থানীয়, তবে গাছ বৃদ্ধির প্রথম দিকে অধিক তাপ ও শেষ দিকে অর্থাৎ কন্দ ধরা কালীন সময়ে কম তাপ থাকা বাঞ্ছনীয়৷ অল্প পরিমাণ বরফ পড়াও আলু সহ্য করতে পারে, তবে অধিক শৈত্যে (-২০ হেত ৩০) কন্দের বৃদ্ধি থেমে যায় ও কোষের গঠন নষ্ট হয়ে যায়৷
মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাত ৩০ ইঞ্চি অর্থাৎ ৭৬২ মিলিমিটার আলুর জন্য উপযোগী৷ অধিক বৃষ্টিপাতে আলু মোটেই ভালো হয় না; গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়৷ রোগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ সহজতর হয়৷ তবে পার্বত্য এলাকায় (১৮৬০-২১৭০ মিলিমিটার) অধিক বৃষ্টিপাত হলেও পানি দ্রুত সরে যায় ও ঠাণ্ডা পরিবেশ বিরাজমান থাকে বলে সেরূপ পরিবেশে আলুর চাষ করা যায়৷ তাই পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় এইরূপ পরিবেশে গ্রীষ্মকালে আলু জন্মানো যায়৷
মাটির ধরন : দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি আলুর জন্য সব চাইতে উপযোগী৷ এটেল-দোআঁশ মাটিতেও আলুর চাষ করা যায়, তবে এই রকম মাটিতে আলু খুব একটা ভালো হয় না৷ আলুর মাটি সুনিষ্কাশনযুক্ত, গভীর ও কিছুটা অম্লাত্মক হওয়া চাই৷ PH ৫.৫-৬০ এর মধ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়, এতে আলুর জন্য ক্ষতিকর রোগ স্কেভিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷
চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চল : গোল আলুর এলাকা বলতে আগে রংপুর জেলাকেই বোঝাতো ৷ আজকাল সেই কথা আর ঠিক নয় ৷ বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি আলু উত্ পন্ন হয় ঢাকা জেলায়৷ উল্লেখ্য যে, একমাত্র ঢাকা জেলাতেই দেশের মোট উৎপাদন এক চতুর্থাংশের বেশি আলু উৎপাদিত হয় ৷ বগুড়া, দিনাজপুর, কুমিল্লা, সিলেট এবং চট্টগ্রামেও যথেষ্ট আলু উৎপন্ন হয় ৷ ফলনের দিক হতে অগ্রবর্তী জেলাগুলো হলো ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, নোয়াখালী, ফরিদপুর, খুলনা ও কুমিল্লা৷ জমি তৈরি পদ্ধতি আশ্বিন মাস হতে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজে হাত দিতে হয়৷ জমির প্রকৃতি ভেদে ৫/৬ চাষ ও বার কয়েক মই দিয়ে ভালোভাবে পাইট করে চাষ করতে হয় ৷ আলুর জমি গভীরভাবে চাষ করা উচিত ৷ কোনো কোনো অঞ্চলে যেমন, ঢাকার মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা সদর এলাকার চাষীগণ কোদাল ও লাঙলের সাহায্যেই জমি গভীরভাবে চাষ করে থাকেন ৷ জমি শুধু গভীরভাবে চাষ করলেই হয় না, মাটি যাতে মোলায়েম হয় ও ঝুরঝুরা করে প্রস্তুত করা হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয় ৷ ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ৷
আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি এর অন্যতম বিষয় হলো বীজ বপন পূর্বে করণীয়গুলো জানা : বীজ প্রত্যয়িত হলে বপনের আগে আর কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ অন্যথায় বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো ৷ বীজ শোধনের জন্য মারকিউরিক ক্লোরাইড (Mercuric chloride), ফার্মালডিহাইড (Formaldehyde) অথবা, ইয়েলো অক্সাইড অব মার্কারি (Yellow oxide of mercury) ব্যবহার করা যায় ৷ উক্ত তরল গুলোতে আলুর বীজকে কিছুক্ষণ চুবিয়ে উঠিয়ে নিলেই বীজ শোধন হয়ে যায়৷ তবে কাটা বীজ ব্যবহার করতে গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন-
বীজ বপন : বপনের জন্য আলুর টিউবার অর্থাৎ কন্দ ব্যবহার করা হয়৷ আগের বছরের সুরক্ষিত অঙ্কুরিত বীজ ব্যবহার করা হয় ৷ আশ্বিনের মাঝামাঝি হতে অগ্রাহয়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত আলু লাগানো যেতে পারে৷ তবে আগাম ফসল করতে হলে ভাদ্র মাসের শেষে বীজ বপন করতে হবে ৷
আলু বীজ সারিতে বপন করতে হয় ৷ এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে, এবং সারিতে এক বীজ হতে অন্য বীজের দূরত্ব হবে ২৩-৩৮ সেন্টিমিটার৷ বীজ আস্ত বপন করাই ভালো, তবে আকারে বেশি বড় হলে কেটে দুইভাগ করে লাগান যায়৷ যে বীজের ব্যাস ২ হতে ৩ সেন্টিমিটার সেই বীজই বপনের জন্য উত্তম এবং সেসব বপন বপন করার সময় কাটার প্রয়োজন হয় না ৷
আর যেসব বীজের ব্যাস এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশি সেগুলো কেটে লাগানো যেতে পারে৷ কেটে বপন করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে অর্থাৎ আস্ত বীজ ব্যবহার করলে যদি এক প্রতি হেক্টরে ১৫০০ কেজি লাগে সেক্ষেত্রে কর্তিত বীজ ব্যবহার করলে এর অর্ধেক অর্থাৎ ৭৫০ কেজি বীজ লাগবে ৷
সারিতে দুই পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়:
শেষোক্ত পদ্ধতিটিই বিজ্ঞানসম্মত, কেননা এতে জমির রস অধিক দিন বজায় থাকে এবং সারির মাটি আলগা থাকে বলে আলুর কন্দ বৃদ্ধিতে কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না৷ অন্য দিকে প্রথমোক্ত পদ্ধতিতে নালার মাটি চাপ খাওয়া থাকে বলে স্কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়৷ ফলে কন্দ অর্থাৎ আলুর আকার ছোট থেকে যায় ৷
বীজ হার : বপনের জন্য প্রতি হেক্টরে সাধারণত ১৫০০-২০০০ কেজি বীজ লাগে৷ তবে বীজ আকারে বড় হলে কিছু বেশি এবং ছোট হলে কিছু কম লাগে৷ বপন দূরত্ব: রোপণের দূরত্ব ৬০ -২৫ সেন্টিমিটার (আস্ত আলু) এবং ৪৫-১৫ সেন্টিমিটার (কাটা আলু) ৷
আলুর চাষাবাদ পদ্ধতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সার ব্যবস্থাপনা। সারের পরিমাণ: আলু চাষে নিচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন ৷
সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর সারের পরিমাণ/শতাংশ
ইউরিয়া ২২০ – ২৫০ কেজি ঌ০০ গ্রাম – ১ কেজি
টিএসপি ১২০ – ১৫০ কেজি ৫০০ – ৬০০ গ্রাম
এমপি ২২০ – ২৫০ কেজি ঌ০০ গ্রাম – ১ কেজি
জিপসাম ১০০ – ১২০ কেজি ৪০০ – ৫০০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট ৮ – ১০ কেজি ৩০ -৪০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট
(অম্লীয় বেলে মাটির জন্য) ৮০ – ১০০ কেজি ৩০০ -৪০০ গ্রাম
বোরন (বেলে মাটির জন্য) ৮ – ১০ কেজি ৩০ -৪০ গ্রাম
গোবর সার ৮ – ১০ টন ৩০ -৪০ টন
সার প্রয়োগ পদ্ধতি: গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট (প্রয়োজন বোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে৷ বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে৷ অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরন ৮-১০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় ৷
সেচ ব্যবস্থাপনা: এদেশে অনেক চাষী বিশেষ করে যারা দেশী আলুর চাষ করেন তারা আলুর জমিতে সেচের পানি ব্যবহার করতে চান না৷ কিন্তু অধিক ফলনশীল আলুর জাতে অধিক সার ব্যবহার করলে আলুর জমিতে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহার করা আবশ্যক৷ আলুর জমিতে সেচ দেওয়া বেশ সুবিধাজনক৷ সারিতে গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে দেওয়ার ফলে যে জুলি বা নালার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে দিলেই সারা ক্ষেত পানিতে সিক্ত হয়ে যায় ৷
আলুর জমি সব সময় রসযুক্ত থাকবে সেই বিবেচনায় আলু ক্ষেতে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে৷ মাটির প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে ২/৩ বার সেচ দিলেই চলবে৷ অধিক সেচে কোনো লাভ নেই, তাতে বরং উপকারের চাইতে অপকারই হবে৷ এই অবস্থায় গাছে ছোট ছোট নিম্নমানের আলু ধরবে৷ আবার অনিয়মিত পানি ব্যবহার করলে গুটি যুক্ত ফাঁপা ধরনের আলু জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে৷ আলু উঠানোর দুই সপ্তাহ পূর্ব হতে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে৷ এতে আলুর পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে ৷
আগাছা দমন: বীজ বপনের ৬০ দিন পর্যন্ত আলুর ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হয়৷ আলুর জমিতে আগাছা দমন আলাদাভাবে করার প্রয়োজন পড়ে না ৷ গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ও গোঁড়ার মাটি আলগা করে দেয়ার সময়ই আগাছা দমন হয়ে যায় ৷
আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি এর মধ্যে অন্যতম হলো পোকার আক্রমণ ও দমন: আলুর কাটুই পোকা বিষয়ে জানা।
ক্ষতির ধরন :
পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে ৷ আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোঁড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷
প্রতিকার: ১৷ কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টেপাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিৎ ৷
২৷ কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরপাইরিফস এবং সাইপারমেথ্রিন (নুরফস) ৫৫ ইসি ৫ মিলিমিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে ৷ আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে৷
আলুর সুতলী পোকা: আলুর সুতলী পোকার মথ আকারে ছোট, ঝালযুক্ত, সরু ডানা বিশিষ্ট ধূসর বাদামি হয়৷
প্রতিকার : ১৷ বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুড়ার একটি পাতলা স্তর (আলুর উপরে ০.৫ সেন্টিমিটার) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে৷
২৷ আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে৷
রোগ দমন: আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা (লেইট ব্লাইট ) রোগ
লক্ষণ :
• প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ভিজা দাগ পড়ে ৷
• ক্রমে দাগ বড় হয় ও সমগ্র পাতা, ডগা ও কাণ্ডের কিছু অংশ ঘিরে ফেলে ৷
• বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যেই জমির অধিকাংশ ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ে ৷
• ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে ৷
• আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়াপোড়া গন্ধ পাওয়া যায় এবং মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে ৷
প্রতিকার :
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা ৷
২. আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে ৷
৩. রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে স্মার্টজেব (৮০%), সুন্দরী (৭২%) ইত্যাদি ছত্রাকনাশক অনুমোদিত হারে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে৷
আলুর আগাম ধসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ
লক্ষণ : ১। নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে-যাওয়া কৌণিক দাগ পড়ে ৷
২। আক্রান্ত অংশে সামান্য বাদামি এলাকার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয় ৷
৩। গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ ৷
৪। আক্রান্ত টিউবারের গায়ে গাঢ় বাদামি থেকে কালচে বসে যাওয়া দাগ পড়ে ৷
৫৷ সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ৷
৬। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সুন্দরী (৭২%) মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে ৷ মেমোরি প্লাস ০.২% হারে প্রয়োগ করা যায় ৷
৭৷ আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে ৷
কাণ্ড ও আলু পচা রোগ লক্ষণ :
• এ রোগের আক্রমণের ফলে বাদামি দাগ কাণ্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে ৷
• গাছ ঢলে পড়ে এবং পাতা বিশেষ করে নিচের পাতা হলদে হয়ে যায় ৷
• আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশের মাটিতে ছত্রাকের সাদা সাদা জালিকা দেখা যায় ৷
• কিছু দিন পর সরিষার দানার মত রোগ জীবাণু গুটি বা স্কেলেরোসিয়া সৃষ্টি হয় ৷
• আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে৷ ক্রমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যায় ৷
প্রতিকার : ১৷ আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটিসহ সরিয়ে ফেলতে হবে ৷
২৷ জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে ৷
৩৷ জমিতে সব সময় পঁচা জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে ৷
আলুর স্টেম ক্যাষ্কার স্কার্ফ রোগের লক্ষণ :
• গজানো অঙ্কুরের মাথায় এবং স্টোলনে আক্রমণের দাগ দেখা যায়৷
• বড় গাছের গোঁড়ার দিকে লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷
• কাণ্ডের সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়৷
• আক্রান্ত টিউবারের গায়ে শক্ত কালচে এবং সুপ্ত রোগ জীবাণু গুটি দেখা যায়৷
প্রতিকার :
১৷ টেরক্লোর হেক্টরপ্রতি ১৫ কেজি মাত্রায় বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ নালায় প্রয়োগ করতে হবে৷
২৷ ৩% বরিক এসিড় দ্বারা বীজ শোধন বা স্প্রে যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়৷
৩৷ বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ পরিহার করতে হবে ৷
৪৷ ভালোভাবে অঙ্কুরিত বীজ আলু রোপণ করতে হবে ৷
ঢলে পড়া এবং বাদামি পচন রোগ
লক্ষণ: গাছের একটি শাখা বা এক অংশ ঢলে পড়তে পারে ৷
প্রতিকার :
১৷ সুস্থ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ৷
২৷ আলু লাগানোর সময় প্রতি হেক্টরে ৮০-ঌ০ কেজি হারে স্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে ৷
৩৷ পরিমিত মাত্রায় সেচ প্রয়োগ করতে হবে এবং রোগ দেখা দিলে পানি সেচ বন্ধ করে দিতে হবে ৷
আলুর দাদ রোগের লক্ষণ : হালকা দাদ হলে টিউবারের উপরে উঁচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামি দাগ পড়ে ৷
• রোগের গভীর দাদে গোলাকার গর্ত বা ডাবা দাগ পড়ে ৷
• রোগের আক্রমণ সাধারণত ত্বকেই সীমাবদ্ধ থাকে ৷
প্রতিকার : ১৷ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে৷
২৷ জমিতে বেশি মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার বর্জন করতে হবে ৷
৩৷ ৩% বরিক এসিড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে ৷
৪৷ জমিতে হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে ৷
আলুর পাতা মোড়ানো রোগের লক্ষণ :• আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায় ৷
• আগার পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় ৷
• কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয় ৷
• গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে৷ আলুর সংখ্যা কমে যায় ৷
প্রতিকার : ১৷ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা৷
২৷ কীটনাশক (পর্বত-২.৫ইসি,পরশমনি-১০ইসি ইত্যাদি) ২ মিলিমিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে ৷
৩৷ আক্রান্ত গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলতে হবে ৷
আলুর মোজাইক রোগের লক্ষণ : পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয় ৷
• ভাইরাস এবং আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষণ ভিন্নতর হয় ৷
• লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায় ৷
প্রতিকার : ১৷ সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ৷
২৷ টমেটো, তামাক এবং কতিপয় সোলানেসি গোত্রভুক্ত আগাছা এ ভাইরাসের বিকল্প পোষক ৷ সুতরাং আশেপাশে এ ধরনের গাছ রাখা যাবে না ৷ আক্রান্ত গাছ আলুসহ রগিং করে ফেলতে হবে ৷
৩৷ জাব পোকা দমন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে অর্থাৎ ১ মিলিমিটার চুড়ান্ত-১.৮ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে৷
আলুর হলদে রোগের লক্ষণ :
• স্থানীয় জাতের আলুতে এ রোগ বেশি হয় ৷
• পাতা কুঁচকে যায় ও ছিটা দাগ দেখা যায় ৷
• দূর থেকে আক্রান্ত গাছ সহজেই চোখে পড়ে৷ আলু ছোট হয় বা একেবারেই হয় না ৷
প্রতিকার :
১৷ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ৷
২৷ রগিং করে আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে ৷
৩৷ কীটনাশক প্রয়োগ করে পাতা ফড়িং দমন করতে হবে৷ এজন্য (পর্বত-২.৫ইসি,পরশমনি-১০ইসি ইত্যাদি) ৭-১০ দিন পর স্প্রে করতে হবে ৷
৪৷ অপেক্ষাকৃত বড় আকারের আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ৷
আলুর শুকনো পচা রোগ
লক্ষণ :
• আলুর গায়ে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে ৷
• আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায় ৷
• প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায় ৷
• আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায় ৷
প্রতিকার :
১৷ আলু ভালোভাবে বাছাই করে সংরক্ষণ করতে হবে ৷
২৷ যথাযথ কিউরিং করে আলু গুদামজাত করতে হবে ৷
৩৷ মাইক-৫০ডব্লিউপি দ্রবণ ০.২% দ্বারা বীজ আলু শোধন করতে হবে ৷
৪৷ বস্তা, ঝুড়ি ও গুদামঘর ইত্যাদি ৫% ফরমালিন দিয়ে শোধন করতে হবে ৷
৫৷ প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম হিসেবে টেকটো ২% গুড়া দিয়ে আলু শোধন করতে হবে ৷
আলুর নরম পচা রোগ
লক্ষণ :
প্রতিকার :
১৷ সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে ৷
২৷ অতিরিক্ত সেচ পরিহার করতে হবে ৷
৩৷ উচ্চ তাপ এড়ানোর জন্য আগাম চাষ করতে হবে ৷
৪৷ ভালোভাবে বাছাই করে আলু সংরক্ষণ করতে হবে ৷
৫৷ ১% ব্লিচিং পাউডার অথবা ৩% বরিক এসিডের দ্রবণে টিউবার শোধন করে বীজ আলু সংরক্ষণ করতে হবে ৷
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া : আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোড়ায় মাটি দেওয়া প্রয়োজন৷ জমিতে আলুর গাছ যখন ৫-৬ ইঞ্চি অর্থাৎ ১২-১৫ সেন্টিমিটার হয় তখন দুই সারির মাঝখানের মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে নরম ঝুরঝুরা করে নিতে হয়৷ এই সময় জমির আগাছা নিধনের কাজও হয়ে যায় ৷ নরম ঝুরঝুরা মাটি কোদালি দ্বারা টেনে সারিতে গাছের দুই দিকে দেওয়া হয় ৷ এর তিন সপ্তাহ পর গোড়ায় আবার মাটি দিতে হয় ৷ গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে আর একবার অর্থাৎ তৃতীয়বারের মতো মাটি দেওয়া হয় ৷ গাছের গোড়ায় এইভাবে মাটি দিলে গাছের স্টোলনগুলো টিউবার অর্থাৎ আলুতে পরিণত হবার সুযোগ পায় ৷ মাটি ঠিকমতো দেওয়া না হলে বর্ধিষ্ণু আলু মাটির বাইরে এসে সবুজ রং ধারণ করে ৷ এ রকম আলু খাবার অনুপোযোগী এবং কখনো কখনো তা বিষাক্তও হতে পারে ৷
পরিপক্বতার লক্ষণ: যখন দেখা যাবে আলু গাছগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে তখনই বুঝতে হবে আলু তোলার উপযুক্ত সময় হয়েছে ৷ সাধারণত আলুবীজ লাগাবার ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই এ আলু তোলা যায় ৷
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: আলু সংগ্রহ : আলুর সারিতে কোদালের সাহয্যে বা লাঙল চালিয়ে আলু মাটি থেকে তোলা হয়৷ তবে আলু তোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আলু কেটে বা থেতলিয়ে না যায়, কেননা আলু থেতলিয়ে গেলে সংরক্ষণ করার সময় পচে যায় ৷
হিমাগারে আলু সংরক্ষণ : গোল আলু সংরক্ষণের এটি একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনা৷ এ ব্যবস্থায় খাবার ও বীজ এই দুই শ্রেণীর আলুই দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়৷ হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ ইট দ্বারা নির্মিত একটি দালান ঘর যাতে শীতলতা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ এজন্য এই ঘরটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন এর দেয়াল ও ছাদে কোথায়ও কোনো ফাঁক না থাকে; তবে এমন নিয়ন্ত্রিত ফাঁক থাকে যার মাধ্যমে ভিতরের গরম আবহাওয়া শোষক পাখার সাহায্যে বের করে দেওয়া যায় ৷
হিমাগারের তাপমাত্রা বীজ আলুর বেলা ৩৮-৪০ ফারেনহাইট (৩.৩-৪.৪ ডিগ্রি সে.) এবং খাবার আলুর জন্য ৫৫-৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১২.৭-১৫.৫ সে.) হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ হিমাগারের অভ্যন্তরে বাতাসের আদ্রতা ৮০%-ঌ০% হবে৷ আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারকে কয়েকটি কক্ষে বিভক্ত করা হয়৷ প্রতিটি কক্ষে উপর্যুপরি কয়েকটি মাচান (বাঁশের অথবা কাঠের) তৈরি করা হয় যাতে অধিক আলু গুদামজাত করা যায় ৷
মাচানে আলু গাদা করে অথবা বস্তায় ভর্তি করে রাখা যায়৷ আলু গাদা করে রাখলে গাদার উচ্চতা কখনো যেন তিন মিটারের বেশি না হয়৷ আলু বস্তায় রাখলে বস্তা মাচানে খাড়া করে রাখতে হবে এবং বস্তা এমনভাবে পাতলা করে রাখতে হবে যাতে বস্তার ভিতরে অনায়াসে বায়ু চলাচল করতে পারে৷ আলু হিমাগারে প্রবেশ ও বাহির করবার সময় একটি নিয়ম পালন করা বাঞ্চনীয়৷ হিমাগারে প্রবেশের পূর্বে আলুকে ১৬-১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৪৮-৭২ ঘন্টার জন্য প্রিকুলিং এবং বাইরে আনার পূর্বে প্রিহিটিং করতে হবে ৷
এতে দুই অবস্থাতেই অর্থাৎ হিমাগারের ঠাণ্ডা ও বাহিরের গরম পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য আলু সহনশীল হয়ে উঠে এবং তাতে করে আলু নষ্ট হওয়া রক্ষা পায়৷ খাবার আলুর বেলায় লক্ষ্য রাখতে হবে হিমাগারের তাপমাত্রা যেন ৪-৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নেমে না আসে, কারণ নিম্ন তাপমাত্রায় আলু স্টার্চ বিয়োজিত হয়ে শ্বেতসারে পরিণত হওয়ার ফলে আলু মিষ্টি হয়ে যায়৷ এইরূপ আলু তখন খাওয়ার উপযোগী থাকে না৷ আবার উচ্চ তাপমাত্রায় আলুতে সহজেই কুঁড়ি জন্মায় যা প্রারম্ভেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ এতেও সহজেই আলু খাবার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে৷ এই পরিস্থিতিতে উপযুক্ত রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করলে আলুতে আর কুঁড়ি জন্মাতে পারে না ৷
কুঁড়ি প্রতিরোধকারী রাসায়নিকগুলো হচ্ছে CIPC, IPPC, TCNB এবং MENA. আলু জমি হতে উঠাবার পূর্বে গাছের পাতায় ম্যালিক হাইড্রাজিড নামক রাসায়নিক প্রয়োগ করলে হিমাগার সংরক্ষণকালে আলুতে কুঁড়ি খুব কম জন্মাতে দেখা যায়। ৩০০০ পিপিএম ম্যালিক হাইড্রাজিড প্রয়োগে আলুতে খুব কম চারা গজায়, অন্যদিকে ২০০০ পিপিএম ম্যালিক হাইড্রাজিড এবং ৯০ দিন পর সিআইপিসি প্রয়োগ করলে আলু অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে অর্থাৎ কুড়িবিহীন থাকে।আলু সাধারণ অথবা হিমাগারে যেভাবেই সংরক্ষণ করা হউক না কেন কতকগুলো পূর্বশর্ত পালন করলে আলু সংরক্ষণে অধিকতর সুফল লাভ করা যায়৷ এই পূর্বশর্তগুলো হলো-
বাড়িতে আলু সংরক্ষণ
কৃষকরা সাধারণত হিমাগার অর্থাৎ কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করেন। আবার অনেক কৃষক বাড়ীতেই আলু সংরক্ষণ করেন। কিন্তু অনেক সময় সংরক্ষণ পদ্ধতি সঠিক না হওয়ায় আলু পচে যায়। বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে হলে আলু সংগ্রহের সময় থেকেই বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় যা নীচে দেওয়া হলো।
• যথেষ্ট রোদ আছে এমন দিনে সকালের দিকে আলু তুলতে হবে। মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে আলু তোলা যাবে না।
• আলু পুরো পোক্ত হলে তবেই তুলতে হবে। তোলার ৭-১০ দিন আগে আলু গাছের গোড়া কেটে ফেলে গাছ আলাদা করতে হবে।
• তোলার সময় সাবধানে আলু তুলতে হবে যাতে কোদাল বা লাঙলের আঘাতে আলু কেটে বা থেঁতলে না যায়। থেঁতলানো আলু সংরক্ষণ করার সময় পচে যায়।
• চটের বস্তায় ভরে আলু বাড়িতে নিয়ে আসা ভাল।
• সাধারণত বস্তায় আলু ভরার সময় প্লাষ্টিকের ঝুড়ি বা গামলা ব্যবহার করা উচিত। বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করতে হলে ঝুড়ির মাঝখানে চট বা ছালা বিছিয়ে সেলাই করে নিতে হবে।
• জমি থেকে তোলা আলু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। যদি কোনো কারণে আলু ক্ষেতে রাখতে হয় তাহলে ছায়াযুক্ত জায়গায় বিছিয়ে পাতলা কাপড়/খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
• বাড়িতে এনে আলু পরিষ্কার ও শুকনা জায়গায় রাখতে হবে। বেশী জোরে, উঁচু থেকে আলু ঢালা না যাবে না। তোলার ৭-১০ দিনের মধ্যে আলু পরিষ্কার করে আকার অনুযায়ী (বড়, মাঝারি ও ছোট) আলাদা করে ফেলতে হবে।
সংরক্ষণের আগের কাজ
• কাটা, ছাল ওঠা, পোকা ধরা ও রোগে ধরা আলু বেছে আলাদা করতে হবে। সংরক্ষিত আলুর মধ্যে রোগাক্রান্ত আলু থাকলে তা অন্যান্য আলুতে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে সব আলু কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে।
• কচি আলু সংরক্ষণ করা উচিত নয়। পুষ্ট ও বাত্তি আলুই সংরক্ষণ করা উচিত কারণ এর রস তাড়াতাড়ি কমে না, ফলে অনেকদিন ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
• জমি থেকে আলু তোলার সঙ্গে সঙ্গে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে ৭/৮ দিন ছায়ায় রাখতে হবে। এতে সংরক্ষণের সময় পোকার আক্রমণ কম হয় এবং আলু মধ্যেকার রস কম শুকায়। তাছাড়া এর ফলে আলুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে আলু পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
বাড়ীতে আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি
• আলু সংরক্ষণের জন্য বাড়ীতে যে কোনো গাছের নীচে যেখানে সূর্যের আলো কম পড়ে সেখানে একটি ছনের ঘর তৈরী করতে হবে।
• মাটি থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার (এক বিঘত) ওপরে একটি মাচা তৈরী করতে হবে।
• মাচা থেকে চাল পর্যন্ত বাঁশের বেড়া দিতে হবে। বাঁশের বেড়া এমনভাবে দিতে হবে যেন ওপরের অংশের বেড়াতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁক থাকে যাতে যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।
• এভাবে তৈরী ঘরে ১৫০-২০০ মন আলু সংরক্ষণ করা যায়।
• সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ দিন পর নিয়মিত বাছাই করতে হবে। রোগাক্রান্ত, পোকা লাগা ও পচা আলু দেখামাত্র ফেলে দিতে হবে।
• আলুতে সুতালি পোকা দেখা গেলে সাথে সাথে বাছাই করে অনেক দূরে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
বাড়ীতে আলু সংরক্ষণের সুবিধা:
• বাড়ীতে আলু সংরক্ষণের জন্য ঘর তৈরীর জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু একবার তৈরী হলে সেখানে অনেক বছর আলু রাখা যায়।
• কৃষক যে কোনো সময় আলু বিক্রি করতে পারেন। হিমাগারে গিয়ে আলু বের করার ঝামেলা থাকে না।
• হিমাগারে আলু নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতায়ত খরচ হয় না।
বাড়ীতে আলু সংরক্ষণের অসুবিধা:
• হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর চেয়ে বাড়িতে সংরক্ষিত আলুর ওজন কমে যায়।
• আলু ৬ মাসের বেশী সংরক্ষণ করা যায় না।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫-২০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত আলুর ৪৮ শতাংশ হিমাগারে সংরক্ষিত হয়। অবশিষ্ট ৫২ শতাংশ আলু কৃষকগণ বাড়িতে সংরক্ষণ করে থাকেন। কিন্তু হিমাগারে এবং বাড়ীতে সুষ্ঠু সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছরই আলু ফসলেই ৫০ কোটি টাকারও বেশী অপচয় হয়।
Leave a Reply