সারা দেশের মতো বগুড়াতেও চিকিৎসকরা সব ধরনের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘটে রয়েছেন তারা। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা আগের নিয়মেই চলছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি এবং নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সংকট সমাধান না হলে আগামীকালও তারা একই কর্মসূচি পালন করবে।
চিকিৎসক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারা দেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে অবস্ট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিকাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। এই ঘোষণার সাথে দেশের সব ডাক্তার সংগঠন একাত্বতা ঘোষণা করেছেন।
এই ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন ডা. ফাহমিদা শিরিন নিলা। এই চিকিৎসক বলেন, আমরা চেম্বার বন্ধ রাখব। খুব জরুরি হলে দুএজনকে দেখব। যেখানে রোগীর জীবন মরণ বাঁচার বিষয় আছে। কিন্তু কুল (কিছুটা ভালো) কেস হলে আমরা করব না। আমরা তো অনেক সময় মুমূর্ষ রোগীকে নিয়ে কাজ করি। অনেক সময় সংকট হয়। আমরা চেষ্টা করি রোগী বাঁচানোর। আমরা তো জীবন দিতে পারি না।
বগুড়ায় প্রায় ৬০ জন গাইনি চিকিৎসক আছে জানিয়ে ডা. নিলা আরও বলেন, ‘কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে ৯৯৯ এ কল করল, পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেলো। এটা কেমন কথা। আমি গ্রেপ্তারের ভয় নিয়ে কীভাবে রোগী দেখব। বরং একটি সুরক্ষা আইন হোক। বিনা তদন্তে গ্রেপ্তার বন্ধ করা হোক।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সমর্থন করে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. পল্লব কুমান সেন। তিনি জানান, কোনো ডাক্তার রোগীকে মারার জন্য চিকিৎসা দেয় না। সুতরাং হুট কোনো চিকিৎসকে গ্রেপ্তার করা ঠিক না। এই সময়ের মধ্যে কোনো জরুরি রোগী আসলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
ডাক্তারের এই কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। আজ দুপুরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর থেকে হার্টের সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন হাসিনা বেগম (৫৬)। সঙ্গে এসছেন তার স্বামী ফজলুল হক (৬৩)। তিনি জানান, স্ত্রীকে নিয়ে অনেক দূর থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পপুলার ক্লিনিকে ডা. শহিদুল হকের কাছে এসেছিলেন। পরে শুনলেন আজকে চিকিৎসকের ধর্মঘট।
আধাঘণ্টা বসে থেকে তারা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দিকে চলে গেছেন। রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির চাকা পায়ের উপর দিয়ে যাওয়ার ফলে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে হোটেল কর্মী ইব্রাহিম হোসেনের। তিনি আজ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরে তিনি শুনেছেন ডাক্তারেরা আজ রোগী দেখবেন না।
এই যুবক বলেন, ডাক্তার রোগী দেখবেন না বলে দোকান থেকে ওষুধ নিয়েছি। খেয়ে দেখি। ভালো না হলে ডাক্তারদের ধর্মঘট শেষ হলে ক্লিনিকে যাব।
তবে বগুড়ার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকলে চালু রয়েছে জেলার একমাত্র খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. সুপ্রতিক ঘাঘড়া বলেন, কর্মবিরতির কথা আমরা শুনেছি। তবে আমাদের এখানে কোনো নির্দশনা আসেনি। এ কারণে মিশন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
Leave a Reply