1. Aktarbd2@ichamotinews.com : ichamotinews : ichamotinews
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
বৃদ্ধ বয়সে মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী নওগাঁর ছেফাতুল্যা - ইছামতী নিউজ
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট নিউজ :
রায়মাঝিড়া গ্রামের জমির ফসল তুলে হাজার হাজার টাকার ক্ষতি রাত থেকে শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান বগুড়ার মহাস্থানগড় শেষ বৈশাখী মেলা উপলক্ষে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের ২৫ বিঘা ভুট্টা জমি পুরে ছাই আদালতের আদেশ অমন্য করে শিবগঞ্জের দেউলি মাদ্রাসার সভাপতির কার্যক্রম অব্যাহত বগুড়ায় পেশা পরিবর্তন করে শরবত বিক্রিতে ঝুঁকছেন অনেকে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপনে আটঘরিয়ায় আফতাব হোসেন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত ধানের হিটশক বা হিট ইনজুরি প্রতিরোধে করণীয় দুর্নীতির জন্য সড়কের পিচ গলছে, তাপমাত্রার জন্য নয় অশ্লীল ছবির সঙ্গে নারীদের ছবি লাগিয়ে ফেসবুকে প্রতারণা- গ্রেপ্তার ৪

বৃদ্ধ বয়সে মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী নওগাঁর ছেফাতুল্যা

Reporter Name
  • Update Time : Tuesday, 18 August, 2020
  • ২৩৯ Time View

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরঘুনাথ এলাকার খামারি মো: ছেফাতুল্যা প্রামানিক। বয়স তার ঠেকেছে ৬০ বছর। এ বয়সেও তিনি জীবনের হাল ছাড়েননি। যেন জীবন যুদ্ধে ধরেছেন বাজি। লেয়ার মুরগির খামার করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। মুক্তি পেয়েছেন আর্থিক দৈন্যতা থেকে।

বয়স মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না। কঠোর পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতার ফলে যে কোন বয়সে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে প্রমাণ করেছেন ছেফাতুল্যা ।

এলাকার মধ্যে তিনি এখন সফল মুরগি খামারি হিসেবে পরিচিত। সুখের আশায় বাড়ির বড় ছেলে, ছোট ছেলে সবাই এ খামারে পরিশ্রম করে চলেছেন। মুরগির খামার করে বেশ স্বাবলম্বী তারা। খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংক ঋণ শোধ করা, সংসারের খরচ মেটাতে সক্ষম তারা।

ছেফাতুল্যা প্রামানিক ৫ বছর আগে খামার শুরু করার সময় জমি বিক্রি করেছিলেন। হাতে টাকার সংকটে নিয়েছিলেন ব্যাংকঋণও। এখন তার ব্যাংকঋণ প্রায় শোধ করে জমিয়েছেন টাকা। আগামীতে তার খামারটা আরও বড় করার জন্য চেষ্টা করছেন। নওগাঁ জেলার অন্যান্য উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবার হাঁস, মুরগি, গরু পালনের মধ্য দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন, তাদের হয়েছে দিন বদল।

পাঁচ বছর আগে ছেফাতুল্যার পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারের টানাপোড়ন যেন কামড়ে ধরে আছে। এলাকায় সর্বপ্রথম ছেফাতুল্যার ছোট ভাই গুলবর রহমান শেয়ারে শুরু করেন লেয়ার মুরগির খামার। নিজ ভাইয়ের সাফল্য দেখে অনুপ্রেরণা পান তিনি। ৫০০ মুরগি দিয়ে নিজেই শুরু করেন খামার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের শুরুতে মুরগির খামার করার জন্য ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার মতো ঋণ গ্রহণ করেন। বিলের মধ্যে নিজের অগভীর নলকূপের পাশের ৫ শতক জায়গাতে টিনের চালা তুলে খামার শুরু করেন। খামারের পাশে অগভীর নলকূপের ঘরেই ছেফাতুল্যা ও তার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম রাত যাপন করেন।

গত ৫ জুন ২০২০ তারিখে ছেফাতুল্যার সঙ্গে কথা হলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, আশেপাশের কয়েকটি খামারে ব্রয়লার মুরগির চাষ করলেও ডিমে বেশি লাভ হওয়ায় লেয়ার মুরগির খামার করেছেন তিনি।

তিনি জানান, উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটের ডিম, মুরগি ও একদিনের বাচ্চার পাইকারি ডিলার ডালিমের কাছে থেকে ৫০০টি একদিনের বাচ্চা কিনেছিলেন। এরপর বিলের মধ্যে পড়ে থাকা ফাঁকা জায়গাতে গড়ে তোলেন খামার। প্রথমে টাকার সংকুলান না হওয়ায় ২ লাখ টাকার মতো জমিও বিক্রি করেছেন। এখন তার খামার বড়ির কাছের ফাঁকা জায়গাতে স্থানান্তর করেছেন। খামারে রয়েছে ১ হাজার লেয়ার মুরগি। প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মুরগি ডিম পাড়ছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইন থাকায় সহজেই পানির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তিনি।খামারে মুরগিকে খাবার দিচ্ছেন ছেফাতুল্যা। ছবি: এগ্রিকেয়ার২৪.কম

ছেফাতুল্যা জানান, করোনার কারণে ডিমে লোকসান হয়েছে। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা খরচ হয়ে যায়। ডিম যদি ৭ টাকা পিস থাকে তাহলে কিছুটা লাভ হয়। করোনায় ডিমের বেঁচাকেনা অল্প হওয়ায় নিয়মিত ডিম কিনতে আসেন না পাইকাররা। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে মুরগির খাদ্য, অষুধ, ভ্যাকসিন কিনতে হয়। কিন্তু ডিম বিক্রি না হওয়ায় ডিলার নাকচ করে দিয়েছিলেন। বাঁকি বন্ধ করে দিয়েছিলেন, আগের মতো আর বাঁকি দিতেন না। কিছুদিন আগে ঈদের পরপরই ডিমের দাম কিছুটা বাড়ার কারণে ইজ্জত রক্ষা হলো বলেও জানান তিনি।

১ হাজার মুরগি তিন মাস আগে ডিম দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে ডিমের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন খামারে ৮’শ ডিম পাওয়া যায়। তবে আরো বাড়বে ডিমের সংখ্যা। করোনার কারণে অভাবে মুরগিকে বেশি খাবার খাওয়াতে পারেনি তিনি। খুচরা হিসেবে প্রতি হালি মুরগির লাল বাদামি ডিম ৩২ টাকা করে এবং পাইকারি শতকরা হিসেবে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা করে।

ছেফাতুল্যা আশা প্রকাশ করে বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করবে। ব্যয় ছাড়াও দৈনিক উল্লেখযোগ্য টাকা আয় করবেন বলে জানান তিনি।

ছেফাতুল্যার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমপাড়া মুরগির খামার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট। লাভ হলে ভালো আবার ডিমের দাম কমে গেলে মুরগি হুট করে বিক্রি করে দেওয়া যায় না। তাই রিস্ক থাকে অনেক। লেয়ার জাতের মুরগি ১৮ থেকে ২২ মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দেয়। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তাই ২২ মাস বয়সের পরে আমার খামারের মুরগিগুলো বিক্রি করে দেব। তখন এসব মুরগি প্রতিটি কমপক্ষে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা জানান, মুরগির রোগ বালাই সাধারণত বেশি হয়। তবে মুরগির ফাইল কলেরা, রানীক্ষেত এবং গামবোরা রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বাচ্চার বয়স ১৫ দিন থেকে ৫০ দিনের মধ্যে গামবোরা এবং ৫০ দিনের মধ্যে রানীক্ষেত ও গামবোরা ভ্যাকসিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

একই এলাকার খামারি সাইদুর রহমানসহ অনেক গ্রামবাসী জানান, আগেও টাকা পয়সা তেমন ছিল না। মুরগির খামার করায় স্বচ্ছল হয়েছেন। এখন আর আগের মতো নেই। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

তারা বলেন, এলাকায় একে অপরের দেখাদেখি মুরগি, হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। তাতে সবারই কমবেশি লাভ হয়। তারা প্রত্যেকেই ব্যবসা ধরে রেখেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমাণ্য চন্দ্র এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, ‘কালিকাপুর, পরানপুর, প্রসাদপুর এসব ইউনিয়নে গরু, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি, লেয়ার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকেই লাভবান হয়েছেন আবার কিছুকিছু খামারি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে ১৩’শ ৮৫ টি, মুরগির খামার ৮৭ টি। ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে ২১০ টি, লেয়ার মুরগি খামার রয়েছে ৩১ টি।

তিনি আরো জানান, লেয়ার মুরগি পালন একটি একটি লাভজনক ব্যবসা। যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ লেয়ার পালনে এগিয়ে এলে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতে করে কমবে বেকারত্ব, বাড়বে কর্মসংস্থান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস খামারি ও বাড়িতে পালনকারীদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *