বরিশাল: বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে ডান পাশে চোখে পড়বে সারি সারি আম, লিচু, সুপারি ও নারিকেল গাছ। সুপারি গাছ জড়িয়ে বেড়ে উঠেছে শিমের লতা। অন্যান্য গাছেও জড়িয়ে আছে শিম গাছের লতা।
ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়, ড্রেনের দুই পাশে, রাস্তার পাশে, জমির আইলে, গাছের নিচে ছায়া ও অর্ধ ছায়া সব পতিত জমিতে সারি সারি মিষ্টি কুমড়া, করলা, লাউ, টমেটো, ব্রোকলি, লেটুস পাতা, বেগুন, পালংশাক, লাল শাক, বরবটি, ক্যাপসিক্যাম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম সহ ১৩ ধরনের শাক সবজির চাষ করেছে কর্তৃপক্ষ। রয়েছে দোতাল (ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচার) কৃষিও অর্থাৎ মাচায় করলা আর নিচে মিষ্টি কুমড়া। সব কৃষির ফলনও হয়েছে বেশ।
প্রধানমন্ত্রী করোনা পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি ইঞ্চি জমির সঠিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করার পর কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট সে পথে হেটেই সফল হয়েছে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না থাকার এই পদ্ধতি এখন কৃষকদের কাছে মডেল।
ইন্সটিটিউটের উপ-সহকারী প্রশিক্ষক আসমা ইসলাম কেয়া বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অবকাঠামো, স্থাপনা এবং পুকুর বাদে ১৭৫ শতাংশ জমি পতিত ছিল। যেখানে কোন ফসল হতো না। কখনও চাষ করা হয়নি। পুরো পতিত জমি এবার কৃষির আওতায় নিয়ে আসেন তারা। বারো মাস এতে কোনো না কোনো শাক-সবজি হবে। এছাড়া একই জমিতে চাষ করা হচ্ছে দোতালা কৃষি (ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচার)। এর মাঁচায় করলা এবং নিচে চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়ার। যে কেউ এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশের বাগানে, ছায়া ও অর্ধ ছায়া জমিতে এসব চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।
বরিশাল কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ-বিন রফিক বলেন, নতুন এই পদ্ধতি ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে সারা ফেলেছে। প্রতি ইঞ্চি জমির সুষ্ঠু ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাঠ দিবস সহ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের পতিত জমিতে চাষাবাদ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
রহমতপুরের স্থানীয় কৃষক শফিক হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বাড়ির আশেপাশে আগে অনেক জমি পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওই জমিতে কৃষি করে ভালো ফলন পেয়েছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট সবজি বাজারে বিক্রি করছেন।
আরেক কৃষি উদ্যোক্তা রিয়াজ সিকদার জানান, পতিত জমিতে ফসল হতো সেটা তিনি জানতেন না। ইন্সটিটিউটের নতুন পদ্ধতির কৃষি দেখে তারাও পতিত জমিতে চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন।
রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ জিএম ইদ্রিস জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকদের নতুন পদ্ধতির দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। কৃষকরা তাদের পতিত জমি কৃষির আওতায় আনলে তারা যেমন নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবেন তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন।
Leave a Reply