মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার | জেলা প্রতিনিধি | ঠাকুরগাঁও
তিন সপ্তাহ পর বৃষ্টির দেখা মিলেছে। শুকিয়ে যাওয়া আমনের জমিতে জমেছে পানি। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে ধানগাছ যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সজীব-সতেজে ভোরে উঠছে ফসলের মাঠ। এতে স্বস্তি এসেছে দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার আমন চাষিদের।
আমন ধান চাষাবাদ সাধারণত বৃষ্টি নির্ভর। এ মৌসুমে বৃষ্টির ওপর ভরসা করেই কৃষকরা আমন চাষ করেন। বোরোর পর করোনার দুর্যোগের মাঝেও আবারো আমন চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকেরা। কিন্তু মৌসুমের শুরুর দিকে পানির অভাবে কৃষকেরা আমনের চারা রোপন করতে পারছিলেন না । আর যেসব জমিতে চারা রোপন করা হয়েছিল বৃষ্টির পানির অভাবে তার বেশির ভাগ ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যেতে দেখা যায়।
এতে মারাত্মক সমস্যায় পরেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও কুলাতে পারছিলেন না। এতে ধান গাছ বাঁচাতে হতাশায় পড়েন কৃষকরা।অবশেষে বৃষ্টির দেখা পেয়ে কৃষকদের হতাশা কেটেছে। এতে আমন ক্ষেতে পানি জমে এখন কৃষকের কাঙ্ক্ষিত পানির প্রত্যাশা পূরণের পথে।
শুকিয়ে যাওয়া আমন ক্ষেতের চারা সতেজ হয়ে সবুজে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে , গত অর্থ বছরের ২১ হাজার ৪৫০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উপজেলার ভান্ডারা, বাঁচোর, নেকমরদ কাশিপুর,রাতোর,ধর্মগড় সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকেরা আমন রোপন প্রায় শেষ করে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দীর্ঘদিন পানির অভাব থাকলেও বর্ষার পানিতে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। উপজেলার ভাংবাড়ি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, বৃষ্টির দেখা না পেয়ে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ধানগাছ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।বৃষ্টি হওয়ায় তার আর বাড়তি খচর গুণতে হবে না। উপজেলার লেহেম্বা এলাকার কৃষক কবির জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ৩ একর জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পরেছিলেন। অবশেষে বেশ কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে তার উঁচু জমি গুলোতেও পানির দেখা মিলেছে এতে তিনি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন। বাঁচোর গ্রামের কৃষক রব্বানী জানান, তিনি এ বছর সাড়ে তিন একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। বৃষ্টির পানির অভাবে তার আমনের ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ায় তার দুশ্চিন্তার যেন শেষ ছিল না। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তার আমনের ক্ষেতেও পর্যাপ্ত পানি জমেছে। চারা গাছ এখন বেশ সতেজ হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সন্জয় দেবনাথ বলেন, চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেয়া হচ্ছে। তবে পানির অভাবে প্রথমের দিকে সামান্য সমস্যা হলেও বেশ কিছুদিনের টানা বর্ষণের ফলে আমন ক্ষেতে পানি জমে আছে। তবে মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কৃষকদের মাঝে সে স্বস্তি ফিরেছে।
Leave a Reply