আসসালামুআলাইকুম।
আমি শিউলী আক্তার। আমার হোম ডিস্টিক টাঙ্গাইল। আমার আব্বুর নাম- মো. শফি উদ্দীন আহমেদ। আমার আম্মুর নাম- আনোয়ারা বেগম। আমার আব্বু কাস্টমস অফিসে চাকরি করতেন। আমরা তিন ভাই -বোন। আমার বড় এক ভাই, আমি মেঝ, আর আমার ছোট এক ভাই। ছোট বেলা থেকেই ঢাকাতেই বেরে উঠা। ঢাকার স্কুলে পড়া। এরপর এস এস সি পাস করি। টাঙ্গাইলের সরকারি কুমিদিনি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করি।
এরপর বিয়ে হয়ে যায়,নিজের পছন্দেই বিয়ে করি। আমার বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা। বিয়ের পর আমার শাশুড়ি মা দ্বিমত পোষণ করেন আমার পড়াশোনার বিষয়ে। খুব কষ্ট লাগতো, কিন্তু চুপ করে বসে ছিলাম না। আমার শাশুড়ি মাকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করতাম। মেয়েরা এখন পড়াশোনা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা এখন আর অবহেলিত নয়। মেয়েরাই মেয়েদেরকে সম্মান করতে হবে তবেই তো এগিয়ে যাবে নারীরা,এগিয়ে যাবে দেশ। বোঝাতে গিয়ে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে ফেলেছি। তাই আমার স্নাতকে ভর্তি হতে অনেকটা সময় গ্যাপ চলে আসে। এরপর আবার ঢাকাতে এসে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক পাস করি। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে থেকে মাস্টার্স করার জন্য এডমিশন নেই। এর পাশাপাশি আমার খুব ইচ্ছে ছিল “ল” পড়ার। কেননা ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল জজ হব। তাই ঢাকাতে আমি “ক্যাপিটাল ল কলেজে” এডমিশনের জন্য এডমিশন এর সমস্ত কাগজপত্র রেডি করি। চোখে আমার অনেক স্বপ্ন,,বার কাউন্সিলের সদস্য হব। সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিস করবো। কিন্তু তাতেও আপত্তি আমার বরের। কেননা এই প্রফেশনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় বলে। আমার বরও “ক্যাপিটাল ল’কলেজে” পড়াশোনা করেছেন। আমার বর এসব বিষয় ভাল জানেন, তাই আমার আর এগিয়ে যাওয়া হয় নি।
এরি মাঝে অনেক সময় অনেক চাকরির অফার আসে। আমার আব্বু+ ভাইয়া দু’জনেই যেহেতু কাস্টমস এ জব করেন, সেহেতু তাদের পক্ষ থেকে আমার অনেক চাকরির অফার আসে। আমার বরের বড় ভাইয়ের কাছ থেকেও পাওয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এর চাকরি পাওয়াও প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়। কেননা আমার বর কোন ভাবেই আমাকে কোন চাকরি করতে বাইরে যেতে দেবেন না। তার মেন্টালিটি ইসলামিক মাইন্ডের।এবং তার ধারণাকে আমি সম্মান করি। তাই এতো দিন আমার অনেক ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমি কোন কিছু করার আগ্রহ পেতাম না। কেননা আমার বর চায় না বলে। আমার বর যেহেতু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা তাই সারাদেশেই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। টান্সফার হয়ে, ঢাকা থেকে আমরা বগুড়া আসি। এখানে এসে প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগতো। নতুন শহর নতুন পরিবেশ সবকিছুই যেন আমার কাছে অচেনা অজানা। তাই কিছুই ভাল লাগ তো না আমার। এমনি এক সময় এক আপু রুপা তার নাম সেই আপুর সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই আপুর মাধ্যমে জানতে পারি টিএমএসএসের কথা। এখান থেকে নারীদেরকে বিভিন্নরকম প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়। আমিও সেই সুযোগ নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর কোর্স করি। বি ডাব্লিউ সি সি আই এর শিপ প্রজেক্ট এর আন্ডারে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর কোর্সটি সম্পন্ন করি। আবার, এরি ধারাবাহিকতায় পেয়ে যাই ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর অ্যাডভান্স ট্রেনিং এর সুযোগ। এই অ্যাডভান্স ট্রেনিং টি করে আগে যা অপূর্ণতা ছিল, তা এই অ্যাডভান্স ট্রেনিং এর মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। নিজেকে আরো ভালো ভাবে তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
এরি মাঝে দেখা পায় “উই” তোত দুই বোনের সঙ্গে। তারাই আমাকে জানায় উই এর কথা।এবং উই গ্রুপে অ্যাড করিয়ে দেয়। তারা হচ্ছে সিরাজুম মুনিরা স্নিগ্ধা,ওয়াজিদা শহিদ মাখফি।
উই গ্রুপে প্রথম দিকে বেশ অনেকটা সময় নেই বুঝে উঠতে। শুধু কমেন্ট করি,এরপর পোস্ট করা শুরু করি। তারপর উই গ্রুপে এসে নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস দিন দিন বেরে যাচ্ছে। অনলাইন পেইজের মাধ্যমে আমার বিজনেস শুরু করি। বেশ ভালো সারা পাই। আমি কাজ করছি হ্যান্ড প্রিন্ট, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি এর সকল পন্য নিয়ে। এছাড়াও রয়েছে টাই-ডাই এর পোশাক যেমন থ্রি পিস, পাঞ্জাবি বেডশীট। এবং রয়েছে ব্লকের পোশাক। অফলাইনেও বেশ ভালো সারা পাচ্ছি। আমার কর্মী আছে ৫-৭ জন,বেসিক্যালি তারা আমার সহযোগীই বলবো। আমি নিজে এখন যেমন স্বাবলম্বী। তেমনি আমার মাধ্যমে আরও কয়েকজন নারী ও স্বাবলম্বী ভাবে জীবন ধারণ করতে পারছেন। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারছি। আমার তৈরিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমি সত্যিই অনেক অনেক কৃতজ্ঞ টি এম এস এস এর প্রতি, এবং উইয়ের জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপুর জন্য।
এ এক নতুন জীবন বদলানোর গল্প। আসলে “জীবন যেখানে যেমন” ছোট বেলার ইচ্ছে গুলো এক রকম, আর বড় হয়ে,, হয়ে যায় অন্য রকম।
আমি এখনো কোন শোরুম নেই নি। আমার কাজ গুলো বাসা থেকেই হচ্ছে। তাই আমার বরের তেমন কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন,তবে না করার পরামর্শই দেন বেশি।
কিন্তু আমরা মেয়েরা চাইলেই সব কিছু করতে পারি। শুধু মাত্র ইচ্ছের প্রয়োজন। প্রবল ইচ্ছে শক্তির বলেয় আমি আজ একজন উদ্যোক্তা। পরিবারের কোন ধরনের সাপোর্ট ছাড়াই আমি আজ একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিগণিত করতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ।।
আমার জীবন বদলানোর গল্পে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই টিএমএসএস কে। এবং আরও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই উই এর জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে। উই এর মাধ্যমে পেয়েছি অনেক সম্মান। উই থেকে পাচ্ছি বিভিন্ন ট্রেনিং এর সুযোগ। যার ফলশ্রুতিতে উদ্যোক্তা জীবনের অনেকটা সফলতা বয়ে আনছে। আমাদের বগুড়ার উই এর জেলা প্রতিনিধি লুবা আপু তার ভালোবাসায় সবাইকে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে সবাইকে। আমরা উদ্যোক্তারা যেকোন সমস্যার সমাধান পেয়ে যাচ্ছি তার মাধ্যমে। অনেক ধন্যবাদ জানাই লুবা আপু কে এবং তার টিমকে।
আমার জীবন বদলানোর গল্পে সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে টিএমএসএস এবং উই। যার জন্য আমি আমাকে নতুন ভাবে নিজেকে ধারণ করতে পারছি। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আলহামদুলিল্লাহ।
আমি আমার বিজনেসে নতুন সংযোজন আনতে যাচ্ছি। আর তা হচ্ছে হোম মেইড সাবান। আমি এবং আমার উদ্যোগের জন্য সকালের কাছে দোয়া প্রার্থী।
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন: www.fb.me/bd.ichamotinews
Leave a Reply