অনন্ত সেলিম | বগুড়া প্রতিনিধি
উদ্যোগই হোক উদ্যোক্তা তৈরীর মূল চাবিকাঠি, বললেন বগুড়ার মেয়ে সাদিয়া ইসলাম।
বুধবার(১৮ই জানুয়ারি) অনন্ত সেলিমের প্রতিবেদনে,সাদিয়া ইসলাম বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার মেয়ে। লেখা পড়া সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করার সময় মা, ভাই, বোনে অমতে বিয়ে করেন তিনি। সেখানে থেকে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ, তখন সে যুদ্ধ টা বেশি কঠিন ছিলো না কারন তার নিজের কাছে তখন অপশন ছিলো ২ টা পড়াশোনা নয়তো স্বামি! তখন তার ভাবনা ছিল স্বামি তো থাকবেই পড়াশোনা কে বেছে নিই। থাকতে হতো শাশুড়ীর সাথে, এস এস সি পরিক্ষার সময় কোনো বই ছিলো না, বোর্ড বই ছাড়া,ছিল না কোন গাইড।
বাচ্চা পেটে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ছিল খুব কঠিন, থেমে থাকে নি তার পড়াশোনা যা এখনও বর্তমান অনার্স তৃতীয় বর্ষ । আরো কঠিন হল ২০১৬ সালে এক দিকে তার এস এস সি পরিক্ষা অন্য দিকে নিজেকে আবার নতুন ভাবে জন্ম দেওয়া।
২০১৬ সালে অনেক কিছু পাওয়া এস এস সি পাশএবং বাচ্চার জন্ম এবং ঐ বছরেই কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে নাচের টিচার হিসাবে যোগদান ।
পাশা পাশি কাজ করতো কাপড় এর, অন্য কারো কাছে থেকে অর্ডার কনফার্ম করে নিজের তৈরি কর্মি দিয়ে কাজ করে নেওয়া। ২০ থেকে ২৫ টা কর্মি তৈরি হয়ে গেলো, তখন শুধু এক জন এর না বিভিন্ন শো রুমে গিয়ে সুতার কাজ এর ফিনিশিং দেখিয়ে তাদের কাছে থেকেও অর্ডার এবং ভালো সারা পেতে থাকে সে।
এই ভাবেই চলতে থাকে দিন মাস শুরু হল এইচ এস সি পরিক্ষা এর মধ্যে একটা চাকরিতে ও ইন হয়ে বগুড়া রাহুল গ্রুপ এ / রাহুল সরিশার তেল। সারিয়াকান্দি থেকে সকাল ৮ টাই বের হতাম ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৭/৮ টা বাজতো ছেলে কে ঘুমিয়ে রেখে গিয়ে সেই ঘুমানোই পাইতো বাচ্চার মা।
ছোট্ট জীবনে কিছু টা সময় কেটেছে শান্তিতে তবে বেশি ভাগই ছিল অশান্তিতে ভরা যার জন্য সে নিজেই দায়ি ছিল তার মতে। দিনের পর দিন বাড়তে থাকে তার অবহেলা এই দিকে তার পরিবারের কেউ তার সাথে কথা বলে না, কি করবে ভেবে পায়না সে। ধৈর্যর বাধ ভেঙে ২০১৯ সালে সারিয়াকান্দি থেকে পাড়ি জমায় বগুড়া শহরে প্রাইভেট একটা কোম্পানি তে জব নেওয়ার জন্য সব কিছু ভালোই চলতে থাকে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল তো ২০২০ সালে। বিষয়টা ছিল যেমন ভয়াবহ ঠিক সেই সময় পুরো পৃথিবীতে নেমে এলো ভয়াবহ রুপ।
চাকরি টা চলেগেল। পাগল পাগল অবস্থায় ভাবে কিভাবে চলবে সে? নিজের কথা বাদ দিয়ে, ছেলেটার কি হবে? ছেলে ছাড়া কেউ নেই তার। অপর দিকে ছেলেরো মা ছাড়া কেউ নেই।
খুব কষ্ট করে করা ঘরের আসবাবপত্র! সেখানে থেকে কিছু জিনিস বিক্রি করে অল্প পুঁজিতে এ শুরু করেন অনলাইন বিজনেস কিন্তু তার কোন ভালো ফিডব্যাক পাই না সে। এর মধ্যে এক কাকার মাধ্যমে জয়েন করে উই গ্রুপে টানা দুই মাস কাজ করে হতাস হয়ে সেখানে থেকে ফিরে আসে। তবে উই এর জননী নাসিমা আক্তার নিশা নামক এক উদ্যোক্তার একটা পোস্ট সামনে পরে তার আবার তৈরি করে নিজেকে।
২ মাস ২৫ দিনে একটা অর্ডার পায় উই থেকে সিলেট এর এক মেয়ের কাছে। ড্রেস টার দাম ছিলো ২৫০০ টাকা ইনবক্স এ মেয়েটাকে বিস্তারিত বলে সে! তা শুনে অগ্রিম টাকা দেয় এবং এই টাকাই ছিলো তার বিজনেস এর মূল টাকা।
১ টাকা নিয়ে সে বিজনেসে নামে নাই। আর এখান থেকেই শুরু তার ঘুরে দারানোর গল্প। এর পরে তার আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নি ।
শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয় দেশের বাহিরেও পৌচ্ছে গেছে নাফি ফ্যাশন এর প্রোডাক্ট আলহামদুলিল্লাহ। এর মধ্যে শুনতে হয়েছে অনেকের কটু কথা, থেমে দিতে পারেনি তার অদম্য উদ্যোক্তা জীবন কে।
এখন সে কাজ করছে বাংলা খাবার নিয়ে যেখানে কর্মি রয়েছে ৫/৭ জন। এবং তার সিগনেচার পন্য সুতার কাজ এ কর্মী আছে প্রায় ১৫/২০ জন অনলাইন এর পাশাপাশি অফ লাইনেও।
ভালো সেল্সের পাশাপাশি কাজ করছে বাংলা খাবার, সুতার কাজ, হ্যান্ড পেইন্ড, পাঞ্জাবি, সিজেন বিজনেস, রাজশাহীর বিখ্যাত ঝোল গুড় ও বগুড়ার উলের শাল নিয়ে। উত্তর অঞ্চলের জন প্রিয় খাবার সিদল সহ নানা রকম রেডি টু মাশকালাই এর ডাল, কুমোর বড়া, রেডি টু গরুর ভুড়ি, রেডি টু হাস,কোন বিজনেস ম্যান নয় এক জন সফল উদ্যোক্তা হতেই এমন উদ্যোগ তার। সে চায় কর্ম দিতে কর্মী তৈরি করতে।
সে মনে করে প্রতিটি নারীর একটা পরিচয় থাকা দরকার নিজের উপর আত্তবিশ্বাস থাকা উচিৎ, তিনি তার একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা নারী আমরারাই পারি”। পরিবারই হোক নারী উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল। উদ্যোগই হোক উদ্যোক্তা উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
Leave a Reply