র্যাব-১২, সিপিএসসি, বগুড়া এর অভিযানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কুলেস হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার ও চোরাইকৃত অটোরিক্সা উদ্ধার করেন। মীর মনির হোসেন,পুলিশ সুপার কোম্পানী কমান্ডার সিপিএসসি, র্যাব-১২, বগুড়া। এক প্রেস ব্রিফিং এ সংবাদ জানায়।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) মোঃ আতাউর প্রামানিক (৪৫), পিতাঃ মৃত দহি প্রামানিক, সাং-মালগ্রাম, থানা-বগুড়া সদর, জেলা বগুড়া সারিয়াকান্দি থানায় হাজির হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন যে, তার ছেলে জিহাদ বাবু (১৭), গত ০৪/১০/২০২৩ খ্রিঃ সকাল আনুমানিক ০৮.০০ টার দিকে অটোরিক্সা নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। কিন্তু সে বাসায় ফিরে না আসায় বগুড়া সদর থানায় ০৫/১০/২০২৩ তরিখে একটি হারানো জিডি করেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন যে সারিয়াকান্দি থানা এলাকায় যমুনা নদীর তীরে একটি অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া গেছে। লাশটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের নয়টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তারা থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার ছেলের বলে সনাক্ত করেন। এর প্রেক্ষিতে সারিয়াকান্দি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা রুজু হয় যার নাম্বার ০৪/২০৩ তারিখ ০৬/১০/2023 খ্রি ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
এ নৃশংস হত্যাকান্ডটি ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় র্যাব-১২, সিপিএসসি, বগুড়া ঘটনার শুরু হতেই ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং সন্দিগ্ধদের উপর ব্যাপক নজরদারী অব্যাহত রাখে। হত্যাকান্ডটির নেপথ্যে কোন পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে কিনা বা শত্রুতামূলকভাবে অন্যকে ফাঁসানোর জন্য করেছে কিনা বা জায়গা জমি নিয়ে ভিকটিমের পরিবারের সাথে অন্য কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে কিনা অথবা ভিকটিমের অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কিনা সবগুলো বিষয় বিবেচনায় রেখে হায়াতদন্ত অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ঘটনাস্থলের আশপাশে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংগ্রহ করতঃ ছায়া তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের মোটিভ উন্মোচনের চেষ্টা চালানো হয়। ছায়া তদন্তকালে ঘটনাস্থল, এলাকাবাসি ও গোয়েন্দা নজরদারি হতে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে মোঃ রনি (২২), পিতাঃ মোঃ ইউনুস আলী, সাং-নন্দগ্রাম (মধ্যপাড়া), থানা-শাজাহানপুর, জেলা-বগুড়া’কে শেরপুর থানাধীন এলাকা থেকে আনুমানিক সকাল ০৬.০০ টার সময় র্যাব-১২, সিপিএসসি, বগুড়ার একটি আলিযানিক দল আটক করে। ধৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত বুধবার ০৪/১০/২০২৩ আনুমানিক দুপুর ২.০০ টার সময় শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজের সামনে হতে সারিয়াকান্দি কালিতলা ঘাটে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধৃত আসামীর পূর্ব পরিচিত দুই জন ভিকটিমের অটোরিক্সা ভাড়া নেয়।
পথিমধ্যে ধৃত আসামী, তার স্ত্রী ও তাদের পরিচিত আরও একজন একই উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পনা মতে একই অটোরিয়ায় ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর পর আনুমানিক বিকেল ০৪.৩০ ঘটিকার সময় তারা সারিয়াকান্দি থানার কালিতলা ঘাটে পৌঁছে। উক্ত স্থানে কিছু সময় অতিবাহিত করার পরে অটোরিক্সাটি গ্যারেজে রেখে ধৃত আসামী এবং তার স্ত্রীকে রেখে অপর দুইজন সঙ্গী অটোচালককে বিভিন্ন কৌশলে তাদের সাথে নিয়ে নৌকাযোগে চরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। আনুমানিক ঘন্টাখানেক পরে অটোরিক্সা চালক ছাড়াই কালিতলা ঘাটে তারা ফিরে আসে।
গ্যারেজে রক্ষিত অটোরিক্সাটি গ্যারেজ হতে নিয়ে আসতে ধৃত আসামীর উপর তার সঙ্গীরা চাপ সৃষ্টি করে ধৃত আসামী তার স্ত্রী সহ গ্যারেজ থেকে অটোরিক্সাটি ছাড়িয়ে নিয়ে অপরাপর সঙ্গীসহ বগুড়া চলে আসে এবং অটোরিক্সাটি তার কাছে যথে। আজকে সকালে অটোরিক্সাটি বগুড়া সদর থানাধীন চেলোপাড়া এলাকায় ফেলে রেখে সে গা ঢাকা দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছিল। ধৃত আসামীকে গ্রেফতারের পর সিপিএসসি, বগুড়া কর্তৃক পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে সকাল আনুমানিক ০৮.০০ টার সময় সদর থানাধীন চেলোপাড়া এলাকা হতে ভিকটিমের অটোরিক্সাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভিকটিমের অটোরিক্সা ছিনিয়ে নেয়াই এ হত্যাকান্ডের মূল উদ্দেশ্য। ধৃত আসামী ও উদ্ধারকৃত অটোরিক্সাটি সারিয়াকান্দি থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply