মোঃ মিরাজুল শেখ, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের চিতলমারীতে আদিবাসি সম্প্রদায়ের জীবন মান উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের টাকা সংঘটনের সভাপতি-সম্পাদকসহ কতিপয় কিছু লোক আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সুবিধা বঞ্চিতরা।
অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় হতে ২০১১ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
এসব বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে মাহেন্দ্র গাড়ি প্রদান, মৎস্য খামার, গভীর নলকুপ স্থাপন, ছাগল পালন, উপবৃত্তির টাকা প্রদানসহ নানা মুখি বরাদ্দ।
উক্ত বরাদ্দের টাকা আশার আলো সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ বিশ্বাস ও তীর্থ আদিবাসি সমবায় সমিতি লিঃ
এই নামে আরেকটি সমিতির হিজলা ইউনিয়নের সভাপতি ফুলমালা বর্মণ ও তার স্বামী উপজেলা আদিবাসি সমিতির সভাপতি অনাদি মন্ডল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সদস্য দেখিয়ে এসব বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চিতলমারী আদিবাসী সমবায় সমিতি লিঃ সাবেক সভাপতি পঙ্কজ বিশ্বাসের চাচাতো ভাই সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস এসব অর্থ আত্মসাৎ করে বর্তমানে অর্ধ কোটি টাকায় পাথরের কংক্রিটের বিলাশ বহুল একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ভূমিহীন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বর্তমানে ৮শ’ ৩৮ শতক জমি নামে বেনামে ক্রয় করেছেন। যার বাজার মূল কয়েক কোটি টাকা। নগদ অর্থসহ বর্তমানে আদিবাসি সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। বিষয়টি নিয়ে আদিবাসি সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের আদিবাসি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী কাজল বিশ্বাসসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানায়, তাদের নামে বরাদ্দকৃত উপবৃত্তির টাকা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে সভাপতি-সম্পাদক আত্মসাৎ করেছে।
এছাড়া আদিবাসি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ভাবে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও সংগঠনের সভাপতি অনাদি মন্ডল অনেক দুরত্বে উপজেলার বেন্নাবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছেন।
বাস্তবে কোন কার্যক্রম নেই সেখানে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যাতায়েত সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
উপজেলার মেলারকূল ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য জয় গোপাল দত্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকার তাদের জন্য নানা ধরণের বরাদ্দ দিলেও এর কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না তারা।এসব টাকা কয়েকজন মিলে লুটপাট করে খাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী তুষার বিশ্বাস জানান, স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর উপজেলা সভাপতি অনাদি মন্ডল ও তার স্ত্রী এই ফুলমালা বর্মণ এই সংঘটনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আদিবাসি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছে। এছাড়া সরকারী বরাদ্দকৃত মাহেন্দ্র গাড়ী তার নিজের শ্যালকের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।
লুটপাটের টাকা দিয়ে তারা বিলাশ বহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। এক সময় অনাদি মন্ডল লোকের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করত অথচ এখন সে কোটিপতি।
সাধারণ আদিবাসিদের টাকা মেরে সে রাতারাতি এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি জানান।
এ বিষয়ে আদিবাসি সমিতির উপজেলা সভাপতি অনাদি ম-লের কাছে এসব অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। এছাড়া তিনি কাগজপত্রে এসব উন্নয়ন ফা-ের কোন হিসাব দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলার সাবোখালী বসবাসরত আদিবাসি সমিতির আরেক নেতা মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তিনি অনেক ঘেরের মালিক। মাছচাষ করে এসব সম্পত্তির মালিক হয়েছেন ও ভবন নির্মাণ করেছেন। তিনি প্রতি বছরে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী জানান, এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply